Tumgik
i2truth-blog · 6 years
Text
কুরআনের আলোকে বিশ্বাসের ভিত্তি
রহমান রহীম আল্লাহ্-র নামে। আল্লাহ্ শান্তি বর্ষিত করুন তাদের উপর যারা সঠিকপথের অনুসরণ করে। - কোনো সৃষ্টি যেমন নিজে নিজেকে অস্তিত্ব দিতে পারে না, তেমনি দৈবক্রমে অস্তিত্বে আসাও সম্ভব নয়। এমন সুশৃঙ্খল-সুনিয়ন্ত্রিত-সুসামঞ্জস্যপূর্ণ পদ্ধতিতে মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও মানবজাতির আবির্ভাব এ কথা অকাট্যভাবে প্রমাণ করে যে, এটি হেলাফেলায় আপনাআপনি হয়নি। নিজেনিজে বিশৃঙ্খলভাবে অস্তিত্বে আসাই কোনো কিছুর পক্ষে সম্ভব না, আর এভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে টিকে থাকা তো বহুদূরের কথা। অতএব একজন অস্তিত্বদানকারী আছেন। এই বুদ্ধিবৃত্তিক অকাট্য প্রমাণ বর্ণনায় আল্লাহ্ নিজে বলেছেন (অনুবাদ) : "তারা কি স্রষ্টা ছাড়া সৃষ্টি হয়েছে, না তারাই স্রষ্টা? তারা কি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছে? বরং তারা দৃঢ় বিশ্বাস করে না।" [আত-তূর ৫২:৩৫-৩৬] সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান যত বাড়ছে, স্রষ্টার মহত্তের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ততই গভীর হচেছ। আল্লাহ্ বলেন (অনুবাদ) : "...পরম করুণাময়ের সৃষ্টিতে তুমি কোনো অসামঞ্জস্য দেখতে পাবে না। তুমি আবার দৃষ্টি ফিরাও, কোনো ত্রুটি দেখতে পাও কি? অতঃপর তুমি দৃষ্টি ফিরাও একের পর এক, সেই দৃষ্টি অবনমিত ও ক্লান্ত হয়ে তোমার দিকে ফিরে আসবে।" [আল-মুল্‌ক ৬৭:৩-৪] মক্কার মুশরিকরাও আল্লাহ্-র অস্তিত্ব ও প্রতিপালকত্বে বিশ্বাস করত। একইসাথে তারা বিভিন্ন মূর্তি, পাথর, গাছ, নক্ষত্র, ফেরেশতা, জ্বিন, মৃতব্যক্তি ইত্যাদি বস্তু ও জীবের ইবাদাত বা উপাসনা করত। আল্লাহ্ ছাড়াও ঐসব দেবদেবীকে ভয়-ভীতি, আশা-আকাঙ্খার সাথে ডাকা, বিপদে তাদের কাছে সাহায্য, আশ্রয়, উদ্ধার প্রার্থনা করা, তাদের নামে যবাই-মানত করা ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শির্ক করত। এদের সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেছেন (অনুবাদ) : "আর তুমি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ’। তবু তারা কীভাবে বিমুখ হয়?" [আয-যুখরুফ ৪৩:৮৭] অন্যস্থানে আল্লাহ্ বলেন (অনুবাদ) : "তাদের অধিকাংশ আল্লাহ্-র প্রতি বিশ্বাস করে, তবে (উপাসনায়) শির্ক করা অবস্থায়।" [ইউসুফ ১২:১০৬] - মহান আল্লাহ্ কোনো কিছুকে অনর্থক সৃষ্টি করেননি। তিনি বলেন (অনুবাদ) : "আর আমি আসমানসমূহ, যমীন এবং এতদোভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তা খেলাচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি এ দুটিকে যথাযথ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।" [আদ-দুখান ৪৪:৩৮-৩৯] বিবেকবান মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে কোনো কিছু কারণ ছাড়া করা থেকে বিরত থাকে। সুতরাং মহান প্রজ্ঞাবান আল্লাহ্ তাআলার ক্ষেত্রে আমরা কি ভাবতে পারি? কুরআনে বলা হয়েছে (অনুবাদ) : "নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে বহু নিদর্শন রয়েছে বোধশক্তিসম্পন্নদের জন্য। যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। আর (বলে) ‘হে আমাদের রব, আপনি এসব অনর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র মহান। সুতরাং আপনি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন’।" [আলি-‘ইমরান ৩:১৯০-১৯১] আল্লাহ্ বলেন (অনুবাদ) : "আমি জিন ও মানুষকে একমাত্র এ কারণে সৃষ্টি করেছি যে, তারা আমারই উপাসনা করবে।" [আয-যারিয়াত ৫১:৫৬] আরও বলা হয়েছে (অনুবাদ) : "আর আল্লাহ্‌ আসমানসমূহ ও যমীনকে সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে এবং যাতে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কাজ অনুযায়ী ফল দেয়া যেতে পারে। আর তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না।" [আল-জাসিয়া ৪৫:২২] - স্রষ্টার অস্তিত্ব নিয়ে তেমন মতভেদ নেই। কিন্তু ধর্ম বা ধর্মবিশ্বাস নিয়ে এত মতবিরোধ কেনো? মানুষ নিজের জন্মগত অনুভূতি দিয়ে এবং সৃষ্টির দিকে তাকিয়ে তার জ্ঞান, যুক্তি ও বিবেক দিয়ে স্রষ্টার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারে। তবে স্রষ্টার বৈশিষ্ট্য কি কি, কিভাবে স্রষ্টাকে ডাকতে হবে, কিভাবে তাঁর সাহায্য, করুণা বা সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে, সৃষ্টির সাথে স্রষ্টার সম্পর্ক কিরূপ হবে, মৃত্যুর পরে মানুষের কি অবস্থা হবে ইত্যাদি বিষয় মানুষ যুক্তি, বিবেক বা গবেষণার মাধ্যমে বুঝতে পারে না। এক্ষেত্রে যখনই মানুষ নিজের ধারণা বা কল্পনার অনুসরণ করে, তখনই মতবিরোধের সৃষ্টি হয় এবং মানুষ বিভ্রান্তিতে নিপতিত হয়। এ জন্য মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ মানুষকে জ্ঞান, বুদ্ধি ও বিবেক দিয়ে সৃষ্টির সেরা রূপে সৃষ্টি করার পরেও তাদের পথ প্রদর্শনের জন্য নবী-রসূল প্রেরণ করেছেন। তিনি যুগে যুগে বিভিন্ন জাতি, সমাজ ও জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে কিছু মহান মানুষকে বেছে নিয়ে তাদের কাছে তাঁর বাণী বা ওহী প্রেরণ করেছেন। মানুষ যুক্তি, বুদ্ধি, বিবেক, গবেষণা ও অভিজ্ঞতা দিয়ে যে সকল বিষয় সঠিক ও চূড়ান্ত সত্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয় না সে সকল বিষয় তিনি ওহী বা প্রত্যাদেশের মাধ্যমে শিক্ষাদান করেছেন। আল্লাহ্ বলেন (অনুবাদ) : "আর রসূলগণকে (পাঠিয়েছি) সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, যাতে আল্লাহ্-র বিপক্ষে রাসূলদের পর মানুষের জন্য কোনো অজুহাত না থাকে। আর আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।" [আন-নিসা ৪:১৬৫] তিনি আরও বলেন (অনুবাদ) : "তিনিই তাঁর বান্দার প্রতি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেন, যাতে তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনতে পারেন। আর নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু, পরম করুণাময়।" [আল-হাদীদ ৫৭:৯] অন্যস্থানে বলেন (অনুবাদ) : "...আর কোনো বহনকারী অপরের (পাপের) বোঝা বহন করবে না। আর রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমি শাস্তি প্রদানকারী নই।" [বানু ইসরাঈল ১৭:১৫] - কুরআন ও হাদীসে একদিকে যেমন আল্লাহ্-র পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমে পাওয়া জ্ঞানের উপর ঈমান বা বিশ্বাসের ভিত্তি স্থাপন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অপরদিকে তেমনি লোকাচার, কুসংস্কার, সামাজিক প্রচলন, ধর্মগুরু-পূর্বপুরুষদের ভুল শ��ক্ষা, অস্পষ্ট ভাসা ভাসা ধারণা বা নিজের ব্যক্তিগত যুক্তি ও পছন্দের উপর বিশ্বাসের ভিত্তি স্থাপন করতে বিশেষভাবে নিষেধ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ্ বলেন (অনুবাদ) : "তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা অনুসরণ করো এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করো।" [আল-আ‘রাফ ৭:৩] পবিত্র কুরআনে আমরা দেখতে পাই যে, বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন জাতির কাছে যখন আল্লাহ্-র নবী-রসূলগণ ইসলাম প্রচার করেন, তখন সেই জাতির কাফের বা অবিশ্বাসীরা নবী-রসূলদের আহ্বান এই যুক্তিতে প্রত্যাখ্যান করেছে যে, তাদের প্রচারিত বিশ্বাস সমাজে প্রচলিত বিশ্বাসের পরিপন্থী, তারা যুগ যুগ ধরে যা জেনে আসছেন ও মেনে আসছেন তার বিরোধী। নূহ {আলাইহিস সালাম} সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে যে, তিনি যখন তার উম্মতকে ইসলামের পথে আহ্বান করলেন তখন তারা তা প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে (অনুবাদ) : "...এ কথাতো আমরা আমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষদের সময়েও শুনিনি।" [আল-মু’মিনূন ২৩:২৪] মূসা {আলাইহিস সালাম} যখন ফিরাউন ও তার সম্প্রদায়কে আল্লাহ্-র পথে আহ্বান করেন তখন তারাও বলে (অনুবাদ) : "...এরূপ কথা আমাদের পিতৃপুরুষদের মধ্যেও শুনিনি।" [আল-কাসাস ২৮:৩৬] সকল যুগে অবিশ্বাসীরা এ যুক্তিতেই ওহী প্রত্যাখ্যান করেছে। আল্লাহ্ বলেন (অনুবাদ) : "আর এভাবেই তোমাদের পূর্বে যখনই আমি কোনো জনপদে সতর্ককারী পাঠিয়েছি, তখনই সেখানকার বিলাসপ্রিয়রা বলেছে, ‘নিশ্চয় আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এক মতাদর্শের উপর পেয়েছি এবং নিশ্চয় আমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করব’।" [আয-যুখরুফ ৪৩:২৩] রসূলুল্লাহ {সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম} যখন মক্কায় ইসলাম প্রচার করেন, তখন মক্কার অবিশ্বাসীরাও এই একই যুক্তিতে তাঁর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে। কুরআন কারীমের বিভিন্ন স্থানে বারংবার তাদের এই যুক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। [দেখুন: লুকমান ৩১:২১, আল-মু’মিনূন ২৩:৬৮] তাদের মতের বিরুদ্ধে ওহীর মতকে গ্রহণ করতে তারা রাজি ছিল না। আবার তাদের বিশ্বাসকে কোনো ওহীর সূত্র দ্বারা প্রমাণ করতেও রাজি ছিল না। - মহান আল্লাহ্ বলেন (অনুবাদ) : "আর তারা রহমানের বান্দা ফেরেশতাদেরকে নারী গণ্য করেছে। তারা কি তাঁদের সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছে? তাদের সাক্ষ্য অবশ্যই লিখে রাখা হবে এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তারা আরও বলে, ‘পরম করুণাময় আল্লাহ্ ইচ্ছা করলে আমরা এদের(দেব-দেবীর) উপাসনা করতাম না’, এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা শুধু মনগড়া কথা বলছে। আমি কি তাদেরকে কুরআনের পূর্বে কোনো কিতাব দিয়েছি, অতঃপর তারা তা দৃঢ়ভাবে ধারণ করে আছে? বরং তারা বলে, ‘আমরা নিশ্চয় আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে এক মতাদর্শের উপর পেয়েছি, আর নিশ্চয় আমরা তাদের পদাঙ্ক অনুসরণে পথপ্রাপ্ত হব’।" [আয-যুখরুফ ৪৩:১৯-২২] এখানে মক্কার মানুষদের দুটি বিশ্বাসের পর্যালোচনা করা হয়েছে। প্রথমত ফিরিশতাগণকে নারী বলে বিশ্বাস করা এবং তাকদীরের বিশ্বাস বা আল্লাহ্-র ক্ষমতার বিশ্বাস বিকৃত করে নিজেদের কর্মকে আল্লাহ্-র পছন্দনীয় বলে দাবি করা। অর্থাৎ আল্লাহ্-র ইচ্ছা ছাড়া তো কিছুই হয় না। কাজেই আল্লাহ্-র ইচ্ছা না হলে তো আমরা ফিরিশতাদের পূজা করতাম না। অথবা আল্লাহ্-র পবিত্র নগরীতে পবিত্র ঘরের মধ্যে আমরা ফিরিশতাদের উপাসনা করে থাকি। এ কর্ম যদি আল্লাহ্-র পছন্দনীয় না হতো তবে তিনি অবশ্যই আমাদের শাস্তি প্রদান করতেন। তিনি যেহেতু আমাদেরকে শাস্তি দেন নি, সেহেতু আমরা বুঝতে পারি যে, এ কর্মে তিনি সন্তুষ্ট রয়েছেন। তাদের এ বিশ্বাসের বিষয়ে কুরআনের বক্তব্য থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, বিশ্বাসের বিষয়টি ‘গাইব’ বা অদৃশ্য জগতের সাথে সম্পৃক্ত। ওহী ছাড়া এ বিষয়ে কিছুই বলা সম্ভব নয়। প্রথম বিষয়টি সম্পর্কে আল্লাহ্ বলেছেন যে, তারা স্পষ্ট দ্ব্যর্থহীন কোনো ওহী এক্ষেত্রে পেশ করতে পারেনা। বরং আন্দাযে আল্লাহ্-র সম্পর্কে মিথ্যা বলে। দ্বিতীয় বিষয়টি কুরআনে বিভিন্ন ভাবে খণ্ডন করা হয়েছে। পূর্ব পুরুষদের অনেকেই সত্যিই নেককার ছিলেন। তবে তাদের নামে যা প্রচলিত তা সঠিক কিনা তা যাচাই করা সম্ভব নয়। কাজেই তাদের দোহাই না দিয়ে সুস্পষ্ট ওহীর নির্দেশনা মত চলতে হবে। এ বিষয়ে কুরআন কারীমে বিভিন্ন স্থানে ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকূব ও অন্যান্য নবী-রসূল {আলাইহিমুস সালাম} এর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে (অনুবাদ) : "সেটা ছিল একটি উম্মত, যারা বিগত হয়েছে। তারা যা অর্জন করেছে, তা তাদের জন্য আর তোমরা যা অর্জন করেছ তা তোমাদের জন্য। আর তারা যা করত, সে সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে না।" [আল-বাকারাহ ২:১৩৪,১৪১] অন্যান্য স্থানে আল্লাহ্ উল্লেখ করেছেন যে, পূর্বপুরুষদের মধ্যে অনেকেই অজ্ঞ ও বিভ্রান্ত ছিলেন। কাজেই ওহীর বিপরীতে এদের দোহাই দেওয়া বিভ্রান্তি বৈ কিছুই নয়। আল্লাহ্ বলেন (অনুবাদ) : "আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা অনুসরণ কর, যা আল্লাহ্ অবতীর্ণ করেছেন’, তারা বলে, ‘বরং আমরা অনুসরণ করব আমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে যার উপর পেয়েছি’। যদি তাদের পিতৃ-পুরুষরা কিছু না বুঝে এবং পথপ্রাপ্ত না হয়, তাহলেও কি?" [আল-বাকারাহ ২:১৭০] - ওহীর বিপরীতে অবিশ্বাসীদের এরূপ বিশ্বাসকে ‘ধারণা’, ‘কল্পনা’ বা ‘অনুমান’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ্ বলেন (অনুবাদ) : "অচিরেই মুশরিকরা বলবে, আল্লাহ্ যদি চাইতেন, আমরা শির্ক করতাম না এবং আমাদের পিতৃপুরুষরাও না এবং আমরা কোনো কিছু নিষিদ্ধ করতাম না’। এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, যে পর্যন্ত না তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে। বল, ‘তোমাদের কাছে কি কোনো জ্ঞান আছে, যা তোমরা আমাদের জন্য প্রকাশ করবে? তোমরা তো শুধু ধারণার অনুসরণ করছ এবং তোমরা তো কেবল অনুমান করছ’।" [আল-আন‘আম ৬:১৪৮] অন্যস্থানে বলা হয়েছে (অনুবাদ) : "আর যদি তুমি যারা যমীনে আছে তাদের অধিকাংশের আনুগত্য কর, তবে তারা তোমাকে আল্লাহ্-র পথ থেকে বিচ্যুত করবে। তারা শুধু ধারণারই অনুসরণ করে এবং তারা শুধু অনুমানই করে।" [আল-আন‘আম ৬:১১৬] আরও বলা হয়েছে (অনুবাদ) : "আর তারা বলে, ‘দুনিয়ার জীবনই আমাদের একমাত্র জীবন। আমরা মরি ও বাঁচি এখানেই। আর মহাকাল-ই কেবল আমাদেরকে ধ্বংস করে।’ বস্তুত এ বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞান নেই। তারা শুধু ধারণাই করে।" [আল-জাসিয়া ৪৫:২৪] অন্যত্র আল্লাহ্ বলেন (অনুবাদ) : "আর তাদের অধিকাংশ কেবল ধারণার অনুসরণ করে। নিশ্চয় সত্যের বিপরীতে ধারণা কোনো কার্যকারিতা রাখে না । নিশ্চয় আল্লাহ্ তারা যা করে সে সম্পর্কে সম্যক অবগত।" [ইউনুস ১০:৩৬] এছাড়া এরূপ বিশ্বাসকে ‘প্রবৃত্তির অনুসরণ’ বা নিজের মন-মর্জি বা ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের অনুসরণ বলে অভিহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ আমার কাছে পছন্দ হওয়ায় আমি এই মত গ্রহণ করলাম এবং আমার কাছে পছন্দ নয় কাজেই আমি এই মত গ্রহণ করলাম না। আমার পছন্দ-অপছন্দ আমি ‘ওহী’ দ্বারা প্রমাণ করতে বাধ্য নই। এ বিষয়ে কুরআন কারীমে বলা হয়েছে (অনুবাদ) : "অতঃপর তারা যদি তোমার আহবানে সাড়া না দেয়, তাহলে জেনে রাখ, তারা তো নিজদের খেয়ালখুশীর অনুসরণ করে। আর আল্লাহ্-র দিকনির্দেশনা ছাড়া যে নিজের খেয়ালখুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? নিশ্চয় আল্লাহ্ সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়কে পথনির্দেশ করেন না।" [আল-কাসাস ২৮:৫০] অন্যত্র মহান আল্লাহ্ বলেন (অনুবাদ) : "এগুলো কেবল কতিপয় নাম, যে নামগুলো তোমরা ও তোমাদের পিতৃপুরুষেরা রেখেছ। এ ব্যাপারে আল্লাহ্ কোনো দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি। তারা তো কেবল অনুমান এবং নিজেরা যা চায়, তার অনুসরণ করে। অথচ তাদের কাছে তাদের রবের পক্ষ থেকে পথ-নির্দেশ এসেছে।" [আন-নাজ্‌ম ৫৩:২৩] কুরআন কারীমে বিভিন্ন স্থানে বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। [দেখুন: আর-রূম ৩০:২৯, আল-কাহ্‌ফ ১৮:২৮] - মনে করুন, কোনো সমাজে প্রচলিত আছে যে কারো জ্বর হলে অমুক গাছের রস বা ফল খেল��� সুস্থ হয়ে যাবে। সেখানে এ কথাও প্রচলিত যে, অমুক কাজ করলে আল্লাহ্ তাকে পুরস্কার দিবেন বা সে মৃত্যুর পরে শান্তি পাবে। সমাজে প্রচলিত থাকা এই ধারণা দুইটির সঠিকত্বের প্রমাণ নয়। এগুলো ঠিক না ভুল তা জানতে হলে আমাদের জ্ঞানের সন্ধান করতে হবে। প্রথম ধারণাটি প্রমাণ করতে হলে আমাদের ল্যাবরেটরীর গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান অর্জন করতে হবে। দ্বিতীয় ধারণাটি প্রমাণ করতে হলে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে পাওয়া ওহীর জ্ঞানের উপর নির্ভর করতে হবে। কারণ এই বিষয়টি আমাদের মানবীয় গবেষণা ও অভিজ্ঞতার উর্ধ্বে। এজন্য আমরা দেখি যে, বিভিন্ন যুগে যখন কাফিররা তাদের প্রতি প্রেরিত রসূলের উপর ঈমান আনতে অস্বীকার করেছে এবং তাদের সমাজে প্রচলিত ধর্ম ও বিশ্বাসকে সঠিক বলে দাবি করেছে, তখন আল্লাহ্ তাদেরকে ওহীর জ্ঞান থেকে প্রমাণ দিতে করতে আহ্বান করেছেন এবং বিশ্বাসের ব্যাপারে ওহীর উপর নির্ভর না করার নিন্দা করেছেন। [দেখুন: আল-বাকারাহ ২:১১১, আলি-‘ইমরান ৩:১৫১, আল-আন‘আম ৬:৮১, আল-আ‘রাফ ৭:৩৩ ও ৭:৭১, ইউনুস ১০:৬৮, ইউসুফ ১২:৪০, আল-আম্বিয়া ২১:২৪, আল-হাজ্জ ২২:৭১, আন-নাম্‌ল ২৭:৬৪, আস-সাফফাত ৩৭:১৫৭, মুমিন(গাফির) ৪০:৩৫] - মক্কার মুশরিকদের অবস্থাও ছিল অনুরূপ। আল্লাহ্ বলেন (অনুবাদ) : "বল, ‘তোমরা আল্লাহ্-র পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো, সেই শরীকদের কথা ভেবে দেখেছ কি? আমাকে দেখাও তারা যমীনের কী সৃষ্টি করেছে? অথবা আসমানসমূহের মধ্যে কি তাদের কোনো অংশীদারিত্ব আছে? অথবা আমি কি তাদেরকে কোনো কিতাব দিয়েছি, যার কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণের উপর তারা আছে?’ বরং যালিমরা একে অপরকে কেবল প্রতারণামূলক প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে।" [ফাতির ৩৫:৪০] এখানে প্রমাণপেশের পদ্ধতি বিশেষভাবে লক্ষণীয়। আল্লাহ্-র পরিবর্তে যাদেরকে ডাকা হয় তাদেরকে ডাকার পিছনে যৌক্তিকতা কি? তারা কি বিশ্বের কোনো কিছু সৃষ্টি করেছেন? মুশরিকরা স্বীকার করে যে, তারা কোনোকিছুই সৃষ্টি করেন নি, বরং মহান আল্লাহ্ই মহাবিশ্বের একমাত্র স্রষ্টা ও রব(প্রতিপালক)। তাই তাকে ছাড়া অন্যের উপাসনা করা বা বিপদে আপদে অন্য কাউকে ডাকা বিবেক বিরুদ্ধ। দ্বিতীয় পর্যায়ে ওহীর প্রমাণ চাওয়া হয়েছে। তাদের এ যুক্তিবিরুদ্ধ কর্মের পক্ষে তারা দাবি করত যে, তারা যাদের ইবাদাত করে বা বিপদে আপদে যাদেরকে ডাকে তারা আল্লাহ্-র প্রিয় ব্যক্তিত্ব, আল্লাহ্ তাদেরকে ভালবাসেন। তাদের এ দাবি আংশিক সত্য ছিল। কারণ এদের অনেকেই মূলত নবী, ফিরিশতা বা নেককার মানুষ ছিলেন। আর কিছু ছিল কাল্পনিক ব্যক্তিত্ব। তবে আল্লাহ্-র প্রিয় হওয়া তো ইবাদাত পাওয়ার বা ইলাহ(উপাস্য) হওয়ার কোনো প্রমাণ নয়। এজন্য মুশরিকরা এক্ষেত্রে আরো দুটি দাবি করত। প্রথমত তারা দাবি করত যে, এদের ডাকলে বা এদের উপাসনা করলে এরা আল্লাহ্-র নৈকট্য মিলিয়ে দেন।[1] দ্বিতীয়ত তারা দাবি করত যে, আল্লাহ্-র দরবারে আমাদের জন্য সুপারিশ করে আমাদের প্রয়োজন মিটিয়ে দিবেন।[2] মূলত এগুলো তাদের মিথ্যাচার এবং তাদের মনগড়া উদ্ভাবন।[3] যুক্তি ও বিবেক দাবি করে যে, একমাত্র স্রষ্টা ও প্রতিপালকেরই উপাসনা করতে হবে। তবে তিনি যদি ওহীর মাধ্যমে বলে দেন যে, আমার উপাসনার প্রয়োজন নেই, আমার নৈকট্য পেতে হলে আমার প্রিয় ব্যক্তিত্বদের উপাসনা করতে হবে, অথবা আমার কাছে সরাসরি কিছু চাইলে তা পাওয়া যাবে না, বরং আমার প্রিয় বান্দাদের নিকট তোমাদের আবদার পেশ করবে, তারা আমার কাছে তোমাদের জন্য সুপারিশ করবে। যদি এরূপ কোনো নির্দেশ তিনি সুস্পষ্টভাবে দিতেন, তবে আমরা তাঁর নির্দেশ পালন করতাম। এরূপ কোনো নির্দেশ তিনি কখনই দেন নি।[4] সবশেষে মহান আল্লাহ্ তাদের শির্কের প্রকৃত অবস্থা জানিয়েছেন। বস্তুত তারা একে অপরকে তাদের মিথ্যা ও কল্পনা প্রসূত প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। তোমরা এদের উপাসনা করো, এদের কাছে প্রার্থনা করো, এদেরকে ডাকো, এরা তোমাদের ত্রাণ করবে, পরকালে মুক্তি দেবে ইত্যাদি মিথ্যা প্রতিশ্রুতিই তাদের একমাত্র সম্বল। - [1] (অনুবাদ) "জেনে রেখ, আল্লাহ্-র জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য। আর যারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা কেবল এজন্যই তাদের ইবাদাত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহ্-র নিকটবর্তী করে দেবে।’..." [আয-যুমার ৩৯:৩] [2] (অনুবাদ) "আর তারা আল্লাহ্ ছাড়া এমন কিছুর উপাসনা করছে, যা তাদের ক্ষতি করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, ‘এরা আল্লাহ্-র নিকট আমাদের সুপারিশকারী’। বল, ‘তোমরা কি আল্লাহ্কে আসমানসমূহ ও যমীনে থাকা এমন বিষয়ে সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন’? তিনি পবিত্র মহান এবং তারা যা শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে।" [ইউনুস ১০:১৮] [3] (অনুবাদ) "অতঃপর তারা আল্লাহ্-র সান্নিধ্য লাভের জন্য আল্লাহ্-র পরিবর্তে যাদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিল, তারা কেন তাদেরকে সাহায্য করল না? বরং তারা তাদের থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল, আর এটা তাদের মিথ্যাচার এবং তাদের মনগড়া উদ্ভাবন।" [আল-আহকাফ ৪৬:২৮] [4] (অনুবাদ) "আমি কি তাদের প্রতি এমন কোনো প্রমাণ নাযিল করেছি, যা তাদের শরীক করতে বলে?" [আর-রূম ৩০:৩৫] - ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখিত "কুরআন সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা" বই অবলম্বনে। - আল্লাহ বলেন (অনুবাদ) : "সুতরাং তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে এবং তার কাছে সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে? জাহান্নামই কি কাফিরদের আবাসস্থল নয়?" [আয-যুমার ৩৯:৩২] আরও বলেন (অনুবাদ) : "আর বলো, ‘সত্য তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। সুতরাং যে ইচ্ছা করে সে যেন বিশ্বাস করে এবং যে ইচ্ছা করে সে যেন প্রত্যাখ্যান করে। নিশ্চয় আমি যালিমদের জন্য আগুন প্রস্ত্তত করেছি, যার প্রাচীরগুলো তাদেরকে বেষ্টন করে রেখেছে। যদি তারা পানি চায়, তবে তাদেরকে দেয়া হবে এমন পানি যা গলিত ধাতুর মত, যা চেহারাগুলো ঝলসে দেবে। কী নিকৃষ্ট পানীয়! আর কী মন্দ বিশ্রামস্থল!" [আল-কাহ্‌ফ ১৮:২৯] - ইসলামী PDF বই পড়তে ভিজিট করুন - https://i2truth.tumblr.com/post/175023939662
0 notes
i2truth-blog · 6 years
Text
সমাজে প্রচলিত কিছু শির্ক-কুফর
ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা, প্রচলিত কুসংস্কার, মাজারের খাদেম ও প্রচারকদের কথায় বিশ্বাস, ওলী ও বুজুর্গগণ সম্পর্কে অতিভক্তি, তাঁদের কারামতকে তাঁদের নিজস্ব ক্ষমতা বলে মনে করা ইত্যাদি কারণে মুসলিম সমাজে অগণিত মানুষ বিভিন্ন প্রকার শির্ক ও কুফরীর মধ্যে নিপতিত। এখানে কিছু শির্ক ও কুফরের উল্লেখ করা হল: ১. তাওহীদ বা রিসালাতের কোনো বিষয় অবিশ্বাস করা। যেমন আল্লাহর একত্ব�� বিশ্বাস না করা। মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে তাঁর বান্দা, দাস ও মানুষরূপে বিশ্বাস না করা। অথবা তাঁকে আল্লাহর অবতার, আল্লাহ্ তাঁর সাথে মিশে গিয়েছেন, ‘যে আল্লাহ্ সে-ই রসূল’ ইত্যাদি মনে করা। অথবা তাঁকে আল্লাহর নবী ও রাসূল রূপে না মানা। তাঁকে কোনো বিশেষ যুগ, জাতি বা দেশের নবী মনে করা। তাঁর কোনো কথা বা শিক্ষাকে ভুল বা অচল মনে করা। আল্লাহর নৈকট্য, সন্তুষ্টি ও মুক্তি পাওয়ার জন্য তাঁর শিক্ষার অতিরিক্ত কোনো শিক্ষা, মত বা পথ আছে, থাকতে পারে বা প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করা। ২. আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কেউ এ বিশ্বের প্রতিপালন বা পরিচালনায় অংশীদার আছেন বলে বিশ্বাস করা। অন্য কোনো সৃষ্টি, প্রাণী, ফিরিশতা, জীবিত বা মৃত মানুষ, নবী, ওলী সৃষ্টি, পরিচালনা, অদৃশ্য জ্ঞান, অদৃশ্য সাহায্য, রিযিক দান, জীবন দান, সুস্থতা বা রোগব্যাধি দান, বৃষ্টি দান, বরকত দান, অনাবৃষ্টি প্রদান, অমঙ্গল প্রদান ইত্যাদি কোনো প্রকার কল্যাণ বা অকল্যাণের কোনো ক্ষমতা রাখেন বা আল্লাহ্ কাউকে অনুরূপ ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন বলে বিশ্বাস করা। ৩. আল্লাহ্ ছাড়া কোনো নবী, ওলী, জিন বা ফিরিশতা সকল প্রকার অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী, দূরের ডাক শুনতে পারেন, সাড়া দিতে পারেন, নবী-ওলীরা সদাসর্বদা সর্বত্র বিরাজমান বা হাজির নাযির বলে বিশ্বাস করা। ৪. রসূলুল্লাহ (ﷺ), ঈসা (আ) বা অন্য কাউকে আল্লাহর যাত (সত্তা) বা সিফাত (বিশেষণ)-এর অংশ, আল্লাহর সত্তা, বিশেষণ বা নূর থেকে সৃষ্ট বা জন্মদেওয়া বলে বিশ্বাস করা। ৫. কোনো বস্তু, প্রাণী, কর্ম, বার, তিথি, মাস ইত্যাদিকে অশুভ, অমঙ্গল বলে মনে করা স্পষ্ট শির্ক। আমাদের দেশে অনেক মুসলিমও ‘কী করলে কী হয়’ জাতীয় অনেক বিষয় বিশ্বাস করেন। এগুলি সবই শির্ক। জন্মদিনে নখ-চুল কাটা, ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখা, রাতে নখ কাটা, পিছন থেকে ডাকা, কাক ডাকা ইত্যাদি অগণিত বিষয়কে অমঙ্গল বা অশুভ মনে করা হয়, যা নিতান্তই কুসংস্কার, মিথ্যা ও শির্কী বিশ্বাস। পাপে অমঙ্গল ও পুণ্যে কল্যাণ। সৃষ্টির সেবায় সকল মঙ্গল নিহিত ও সৃষ্টির ক্ষতি করা বা অধিকার নষ্ট করার মধ্যে নিহিত সকল অমঙ্গল। এছাড়া অমঙ্গল বা অশুভ বলে কিছুই নেই। ৬. আল্লাহ্ ছাড়া কারো ইবাদত করা। আল্লাহ্ ছাড়া কোনো দৃশ্য বা অদৃশ্য, জীবিত বা মৃত প্রাণী বা বস্তুকে; যেমন মানুষ, জিন, ফিরিশতা, মাযার, কবর, পাথর, গাছ ইত্যাদিকে সাজদা করা, অলৌকিক সাহায্য, ত্রাণ, দীর্ঘায়ু, রোগমুক্তি, বিপদমুক্তি, সন্তান ইত্যাদি প্রার্থনা করা। তাদের নামে মানত, কুরবানি বা উৎসর্গ করা শির্ক। আল্লাহ্ ছাড়া কারো জন্য- জীবিত বা মৃত, নবী, ওলী, ফিরিশতা বা যে কোনো নামে বা প্রকারে কারো জন্য- এগুলি করা হলে তা শির্ক। মূর্তিতে ভক্তিভরে ফুল দেয়া, মূর্তির সামনে নীরবে বা ভক্তিভরে দাঁড়ানো ইত্যাদি এজাতীয় শির্কতুল্য কর্ম। ৭. আল্লাহর জন্য কোনো ইবাদত করে সে ইবাদত দ্বারা আল্লাহর সাথে অন্য কারো সম্মান প্রদর্শন বা সন্তুষ্টি কামনাও শির্ক। যেমন আল্লাহর জন্য সাজদা করা তবে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুকে সামনে রেখে সাজদা করা, যেন আল্লাহর সাজদার সাথে সাথে তাকেও সম্মান করা হয়ে যায়। অথবা আল্লাহর জন্য মানত করে কোনো জীবিত বা মৃত ওলী, ফিরিশতা, জিন, কবর, মাযার, পাথর, গাছ ইত্যাদিকে মানতের সাথে সংযুক্ত করা। ৮. আল্লাহ্, তাঁর রাসূল বা তাঁর দ্বীনের মৌলিক কোনো বিষয় অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা, অবজ্ঞা করা বা অপছন্দ করা কুফর। এ জাতীয় প্রচলিত কুফরীর মধ্যে অন্যতম আল্লাহর বিভিন্ন বিধান, যেমন – নামায, পর্দা, বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি, ইসলামী আইন ইত্যাদির প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ বা এগুলিকে বর্তমানে অচল বা মধ্যযুগীয় মনে করা। ৯. ইসলামকে শুধু ব্যক্তি জীবনে পালন করতে হবে এবং সমাজ, বিচার, শিক্ষা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ইসলাম চলবে না বলে মনে করা, ইসলামের কোনো বিধান বা রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কোনো সুন্নাতের প্রতি অবজ্ঞা বা ঘৃণা প্রকাশ করা, ওয়াজ মাহফিল, যিক্র, তিলাওয়াত, নামায, মাদ্রাসা, মসজিদ, বোরকা, পর্দা ইত্যাদির প্রতি অবজ্ঞা বা ঘৃণা অনুভব করা, রসূলুল্লাহ (ﷺ) বা পূর্ববর্তী অন্য কোনো নবী-রসূলের প্রতি সামান্যতম অবজ্ঞা প্রকাশ করা। ১০. মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর সর্বশেষ নবী হওয়ার বিষয়ে সামান্যতম সন্দেহ পোষণ করা, তাঁর পরে কারো কাছে কোনো প্রকার নবুওয়াত এসেছে বা আসা সম্ভব বলে বিশ্বাস করা। ১১. সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শেখানো নিয়ম, পদ্ধতি, রীতি, নীতি, আদর্শ, আইন ইত্যাদি ছাড়া অন্য কোনো নিয়ম, নীতি, মতবাদ বা আদর্শ বেশী কার্যকর, উপকারী বা উপযোগী বলে মনে করা। যুগের প্রয়োজনে তাঁর শেখানো পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করা। ১২. যে কোনো প্রকার কুফরীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকাও কুফরী। উপরে বর্ণিত কোনো কুফর বা শির্কে লিপ্ত মানুষকে মুসলিম মনে করা বা তাঁদের আকীদার প্রতি সন্তুষ্ট থাকাও কুফরী। যেমন যারা রাসূলুল্লাহ সা. কে সর্বশেষ নবী বলে মানেন না বা তাঁর পরে কোনো নবী থাকতে পারে বা ওহী আসতে পারে বলে বিশ্বাস করেন তাদেরকে কাফির মনে না করা কুফরী। অনুরূপভাবে ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্মকে সঠিক বা পারলৌকিক মুক্তির মাধ্যম বলে মনে করা, সব ধর্মই ঠিক মনে করা কুফর। অন্যান্য ধর্মের শির্ক বা কুফরমূলক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা, সেগুলির প্রতি মনের মধ্যে ঘৃণাবোধ না থাকা, অন্য ধর্মাবলম্বীগণকে আন্তরিক বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করা, তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের অনুকরণ করা, ক্রিসমাস (বড়দিন), পূজা ইত্যাদিতে আনন্দ-উদ্যাপন করা ইত্যাদি বর্তমান যুগে অতি প্রচলিত কুফরী কর্ম ও বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত। ইসলাম সকল ধর্মের অনুসারীদের ধর্মীয় অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের ধর্ম পালনে বাধা দেওয়া নিষিদ্ধ। তবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও মুক্তি একমাত্র ইসলামের মধ্যে বলে বিশ্বাস ঈমানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সকল ধর্মই সঠিক বলার অর্থ সকল ধর্মকে মিথ্যা বলা এবং সকল ধর্মকে অবিশ্বাস করা। কারণ প্রত্যেক ধর্মেই অন্য ধর্মকে মিথ্যা বলা হয়েছে। ১৩. আরেকটি প্রচলিত কুফরী হল গণক, জ্যোতিষী, হস্তরেখাবিদ, রাশিবিদ, জটা ফকির বা অন্য কানো ভাগ্যগণনা, ভবিষ্যৎ গণনা বা গোপন জ্ঞান দাবি করা অথবা এসকল মানুষের কথায় বিশ্বাস করা। এ ধরণের কোনো কোনো কর্ম ইসলামের নামেও করা হয়। যেমন, ‘এলেম দ্বারা চোর ধরা’। যে নামে বা যে পদ্ধতিতেই করা হোক গোপন তথ্য, গায়েব, অদৃশ্য, ভবিষ্যৎ বা ভাগ্য গণনা বা বলা জাতীয় সকল কর্মই কুফরী কর্ম। অনুরূপভাবে কোনো দ্রব্য, পাথর, ধাতু, অষ্টধাতু, গ্রহ বা এ জাতীয় কোনো কিছু মানুষের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে অথবা দৈহিক বা মানসিক ভালমন্দ করতে পারে বলে বিশ্বাস করা শির্ক। ১৪. রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শেখানো কোনো কর্ম, আইন, বিধান, রীতি, কর্মপদ্ধতি বা ইবাদত পদ্ধতিকে অবজ্ঞা বা উপহাস করা। ১৫. কোনো মানুষকে রসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর শরীয়তের উর্ধ্বে মনে করা বা কোনো কোনো মানুষের জন্য শরীয়তের বিধান পালন করা জরুরী নয় বলে বিশ্বাস করা কুফরী। যেমন, মারিফাত বা মহব্বত অর্জন হলে, বিশেষ মাকামে পৌঁছালে আর শরীয়ত পালন করা লাগবে না বলে মনে করা। অনুরূপভাবে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, হালাল উপার্জন, পর্দা ইত্যাদি শরীয়তের যে সকল বিধান প্রকাশ্যে পালন করা ফরয তা কারো জন্য গোপনে পালন করা চলে বলে বিশ্বাস করা। ১৬. যাদু, টোনা, বান ইত্যাদি ব্যবহার করা বা শিক্ষা করা। ১৭. ইসলামকে জানতে-বুঝতে আগ্রহ না থাকা। ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো জানা ও শিক্ষা করাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে না করা বা এ বিষয়ে মনোযোগ না দেয়া। ১৮. আল্লাহ্ ও বান্দার মাঝখানে কোনো মধ্যস্থ আছে বা মধ্যস্থতা ছাড়া আল্লাহর নিকট ক্ষমালাভ, করুণালাভ বা মুক্তিলাভ সম্ভব নয় বলে বিশ্বাস করা শির্ক।
0 notes
i2truth-blog · 6 years
Text
শির্ক-কুফরের প্রকারভেদ
শির্ক আল্লাহর প্রতিপালকত্ব, নাম-গুণাবলি অথবা উপাসনার ক্ষেত্রে তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক বা অংশীদার সাব্যস্ত করার নামই শির্ক। শির্ক দুপ্রকার : ১. বড় শির্ক ২. ছোট শির্ক - শির্কে আকবার (বড় শির্ক) এ ধরণের শির্কে লিপ্ত ব্যক্তি মুসলিম থাকে না। কেউ বড় শির্ক করলে যদি তা থেকে তওবা না করে মারা যায়, তাহলে সে চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে। এটি বান্দার সমস্ত আমল নষ্ট করে দেয়। শির্কে আকবর হলো গায়রুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া যে কোনো ব্যক্তি, প্রাণী বা বস্তুর উপাসনা করা, গায়রুল্লাহর নিকট দুআ করা, গায়রুল্লাহর নামে কুরবানী করা, মান্নাত করা, আল্লাহ ছাড়া কেউ অলৌকিকভাবে কারো ক্ষতি করতে পারে - এ ধরণের ভয় পাওয়া, প্রয়োজন পূর্ণ করা বা বিপদ দূর করার মত যেসব ব্যাপারে গায়রুল্লাহ ক্ষমতা রাখেনা সেসব ব্যাপারে গায়রুল্লাহর কাছে আশা করা, আল্লাহ হারামকৃত বস্তুকে হালাল ও হালালকৃত বিষয়কে হারাম করার ক্ষেত্রে আল্লাহ ছাড়া কারো আনুগত্য করা ইত্যাদি। আল্লাহ বলেন, ❝আর তারা আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর উপাসনা করছে, যা তাদের ক্ষতি করতে পারে না এবং উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, ‘এরা আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী’...❞ [ইউনুস ১০:১৮] - শির্কে আসগার (ছোট শির্ক) এটি বান্দাকে মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয় না, তবে তার তাওহীদের বিশ্বাসে ত্রুটি ও কমতির সৃষ্টি করে। ছোট শির্কে লিপ্ত ব্যক্তি জাহান্নামে গেলে চিরকাল সেখানে অবস্থান করবেনা। এ ধরণের শির্ক দু'প্রকার: ১. স্পষ্ট শির্ক : এ প্রকারের শির্ক কথা ও কাজের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। কথার ক্ষেত্রে শির্কের উদাহরণ: আল্লাহর ব্যতীত অন্য কিছুর কসম ও শপথ করা শির্ক। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ❝যে ব্যক্তি গায়রুল্লার কসম করল, সে কুফুরী কিংবা শির্ক করল❞ [তিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং হাসান বলেছেন। আর হাকেম একে সহীহ বলেছেন] আবার এসব কথা বলা শির্ক যে, "আল্লাহ এবং তুমি যেমন চেয়েছ", "যদি আল্লাহ ও অমুক ব্যক্তি না থাকত" ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে সঠিক হল এভাবে বলা --- "আল্লাহ চেয়েছেন, অতঃপর অমুক যেমন চেয়েছে", "যদি আল্লাহ না থাকতেন, অতঃপর অমুক ব্যক্তি না থাকত"। কোনো এক ব্যক্তি রাসূলকে (ﷺ) "আল্লাহ এবং আপনি যেমন চেয়েছেন" কথাটি বললে তিনি বললেন, ❝তুমি কি আমাকে আল্লাহর সাথে সমকক্ষ স্থির করলে? বরং বল, আল্লাহ এককভাবে যা চেয়েছেন।❞ [নাসায়ী] "এবং" শব্দের বদলে "তারপর" বা "অতঃপর" শব্দের ব্যবহার বান্দার ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার অধীনস্ত করে দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেন (অনুবাদ) : ❝আর তোমরা ইচ্ছা করতে পার না, যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ ইচ্ছা করেন।❞ [আত-তাকউইর ৮১:২৯] আর কাজের ক্ষেত্রে শির্কের উদাহরণ: যেমন বিপদাপদ দূর করার জন্য কড়ি কিংবা দাগা বাঁধা, বদনজর থেকে বাঁচার জন্য তাবীজ লটকানো ইত্যাদি। এসব ব্যাপারে যদি এ বিশ্বাস থাকে যে, এগুলো বিপদ-মসীবত দূর করার মাধ্যম ও উপকরণ, তাহলে তা হবে ছোট শির্ক। কেননা আল্লাহ এগুলোকে সে উপকরণ হিসাবে সৃষ্টি করেননি। পক্ষান্তরে কারো যদি এ বিশ্বাস হয় যে, এসব বস্তু স্বয়ং রোগব্যাধি বা বিপদ দূর করে, তবে তা হবে বড় শির্ক। কেননা এতে গায়রুল্লাহর প্রতি সেই ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে যা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। ২. গোপন শির্ক : এ প্রকার শির্কের স্থান হলো ইচ্ছা, সংকল্প ও নিয়তের মধ্যে। যেমন, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায় এমন কোনো কাজ করে তা দ্বারা মানুষের প্রশংসা লাভের ইচ্ছা করা। যেমন- সুন্দরভাবে নামায পড়া, কিংবা দান করা এ উদ্দেশ্যে যে, মানুষ তার প্রশংসা করবে, অথবা সশব্দে যিকির পড়া ও সুকণ্ঠে তেলাওয়াত করা যাতে তা শুনে লোকজন তার গুণগান করে। যদি কোনো আমলে লোক দেখানোর উদ্দেশ্য সংমিশ্রিত থাকে, তাহলে আল্লাহ তা বাতিল করে দেন। পার্থিব লোভে পড়ে কোনো আমল করাও এ প্রকার শির্কের অন্তর্গত। যেমন- কোনো ব্যক্তি শুধু সম্পদ অর্জনের জন্যেই আযান দেয় অথবা লোকদের ইমামতি করে কিংবা শরয়ী জ্ঞান অর্জন করে বা জিহাদ করে। আল্লাহ বলেন, ❝...যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের উপাসনাতে কাউকে শরীক না করে।❞ [আল-কাহ্‌ফ ১৮:১১০] নবী (ﷺ) তাঁর সাথীদের বলেছেন, ❝তোমাদের উপর আমি যে জিনিসের ভয় সবচেয়ে বেশী করছি তা হল শির্কে আসগার। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন: হে আল্লাহর রাসুল, শির্কে আসগার কি? তিনি বললেন: রিয়া (লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করা)।❞ [আহমদ, তাবারানী, বাগাভী] - কুফর অভিধানে 'কুফর' আবৃত করা ও ঢেকে রাখা অর্থে ব্যবহৃত হয়। আর শরীয়তের পরিভাষায় কুফর ঈমান বা বিশ্বাসের বিপরীত। - কুফরের প্রকারভেদ কুফর দুপ্রকার : ১. বড় কুফর ২. ছোট কুফর বড় কুফর হল যা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থানকে অপরিহার্য করে। আর ছোট কুফর হল যা শাস্তি পাওয়াকে অপরিহার্য করে, চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থানকে নয়। - বড় কুফরের প্রকারভেদ ১. মিথ্যা প্রতিপন্ন করার সাথে সম্পৃক্ত কুফর : আর তা হল রাসূলগণের মিথ্যাবাদী হওয়ার বিশ্বাস পোষণ করা। অর্থাৎ তারা যা কিছু নিয়ে এসেছেন তাতে যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে মিথ্যা সাব্যস্ত করল, সে কুফরী করল। এর দলীল হল আল্লাহর বাণী : ❝আর সে ব্যক্তির চেয়ে যালিম আর কে, যে আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে অথবা তার নিকট সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে? জাহান্নামের মধ্যেই কি কাফিরদের আবাস নয়?❞ [আল-আনকাবূত ২৯:৬৮] ২. অস্বীকার ও অহংকারের মাধ্যমে কুফর : এটা এভাবে হয় যে, রাসূলের সত্যতা এবং তিনি যে আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য নিয়ে এসেছেন সে সম্পর্কে জ্ঞাত থাকা, কিন্তু অহংকার ও হিংসাবশতঃ তাঁর হুকুম না মানা এবং তাঁর নির্দেশ না শোনা। এর দলীল আল্লাহর বাণী : ❝আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে (ও ইবলীসকে) বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। তখন তারা সিজদা করল, ইবলীস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। আর সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হল।❞ [আল-বাকারাহ ২:৩৪] ৩. সংশয়-সন্দেহের কুফর : আর তা হল রাসূলগণের সত্যতা সম্পর্কে ইতস্তত করা এবং দৃঢ় বিশ্বাস না রাখা। একে ধারণা সম্পর্কিত কুফরও বলা হয়। আর ধারণা হল একীন ও দৃঢ় বিশ্বাসের বিপরীত। এর দলীল আল্লাহর বাণী : ❝আর সে তার বাগানে প্রবেশ করল, নিজের প্রতি যুলমরত অবস্থায়। সে বলল, ‘আমি মনে করি না যে, এটি কখনো ধ্বংস হবে’। আর আমি মনে করি না যে, কিয়ামত সংঘটিত হবে। আর আমাকে যদি ফিরিয়ে নেয়া হয় আমার রবের কাছে, তবে নিশ্চয় আমি এর চেয়ে উত্তম প্রত্যাবর্তনস্থল পাব’। তদুত্তরে তার সঙ্গী বলল, ‘তুমি কি তাকে অস্বীকার করছ, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে, অতঃপর ‘বীর্য’ থেকে, তারপর তোমাকে অবয়ব দিয়েছেন পুরুষের’? ‘কিন্তু তিনিই আল্লাহ, আমার রব। আর আমি আমার রবের সাথে কাউকে শরীক করি না’।❞ [আল-কাহ্‌ফ ১৮:৩৫-৩৮] ৪. বিমুখ থাকার মাধ্যমে কুফর : এদ্বারা উদ্দেশ্য হল দ্বীন থেকে পরিপূর্ণভাবে বিমুখ থাকা এমনভাবে যে স্বীয় কর্ণ, হৃদয় ও জ্ঞান দ্বারা ঐ আদর্শ থেকে দূরে থাকা যা রাসূল (ﷺ) নিয়ে এসেছেন। এর দলীল আল্লাহর বাণী : ❝আমি আসমানসমূহ, যমীন ও এতদোভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে, তা যথাযথভাবে ও একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সৃষ্টি করেছি। আর যারা কুফরী করে, তাদেরকে যে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে তা থেকে তারা বিমুখ।❞ [আল-আহকাফ ৪৬:৩] ৫. নিফাকের মাধ্যমে কুফর : এদ্বারা বিশ্বাসগত নিফাক বুঝানো উদ্দেশ্য, যেমন ঈমানকে প্রকাশ করে গোপনে কুফর লালন করা। এর দলীল আল্লাহর বাণী : ❝তা এ জন্য যে, তারা ঈমান এনেছিল তারপর কুফরী করেছিল। ফলে তাদের অন্তরসমূহে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই তারা বুঝতে পারছে না।❞ [আল-মুনাফিকূন ৬৩:৩] - নিফাকের প্রকারভেদ ১. বিশ্বাসগত নিফাক : এটি বড় কুফর যা মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে দেয়। তা ছয় প্রকার - রাসূলকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা, অথবা রাসূল যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন তার কোনো কিছুকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা, কিংবা রাসূলকে ঘৃণা করা, অথবা রাসূল যে দ্বীন নিয়ে এসেছেন তাকে ঘৃণা করা, রাসূলের দ্বীনের ক্ষতিতে খুশি হওয়া, অথবা রাসূলের দ্বীনের বিজয় অপছন্দ করা। ২. কর্মগত নিফাক : তা হল ছোট কুফর যা মুসলিম মিল্লাত থেকে বের করে না। তবে তা বড় ধরণের অপরাধ ও মহাপাপ। তন্মধ্যে রয়েছে সেসব আমল যা নবী (ﷺ) উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, ❝চারটি স্বভাব যার মধ্যে বিদ্যমান সে হবে খাঁটি মুনাফিক। যার মধ্যে এর কোনো একটি স্বভাব থাকবে, তা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি স্বভাব থেকে যায়। সেগুলো হল : ১. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে ২. কথা বললে মিথ্যা বলে ৩. অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে এবং ৪. বিবাদে লিপ্ত হলে অশ্লীল গালি দেয়।❞ [সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] - ছোট কুফর কুরআন ও সুন্নার মধ্যে বড় কুফর পর্যন্ত পৌছে না এ রকম যত কুফরের উল্লেখ এসেছে, তার সবই এ প্রকারের অন্তর্গত। এর উদাহরণের মধ্যে রয়েছে - আল্লাহ তাআলার বাণীতে যা এসেছে : ❝আর আল্লাহ উপমা পেশ করছেন, একটি জনপদ, যা ছিল নিরাপদ ও শান্ত। সবদিক থেকে তার রিয্ক তাতে বিপুলভাবে আসত। অতঃপর সে (জনপদ) আল্লাহর নিআমত অস্বীকার করল। তখন তারা যা করত তার কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষুধা ও ভয়ের পোশাক পরালেন।❞ [আন-নাহ্‌ল ১৬:১১২] এবং রাসূলের (ﷺ) বাণীতে যা এসেছে : ❝দু’টো স্বভাব মানুষের মাঝে রয়েছে, যা কু্ফর বলে গণ্য - বংশের প্রতি কটাক্ষ করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করা।❞ [সহিহ মুসলিম] রাসূলের (ﷺ) বাণীতে আরো এসেছে : ❝আমার পরে তোমরা পরস্পর হত্যাকান্ডে লিপ্ত হয়ে কাফিরে পরিণত হয়ো না।❞ [সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম] এটা এবং এর মত আমলগুলো হল ছোট কুফর। এ ধরণের কুফরে লিপ্ত ব্যক্তি মুসলিম মিল্লাত থেকে বের হয়ে যাবে না। কেননা আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, ❝আর যদি মুমিনদের দু’দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর বাড়াবাড়ি করে, তাহলে যে দলটি বাড়াবাড়ি করবে, তার বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ কর, যতক্ষণ না সে দলটি আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। তারপর যদি দলটি ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ইনসাফের সাথে মীমাংসা কর এবং ন্যায়বিচার কর। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালবাসেন। নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই। কাজেই তোমরা তোমাদের ভাইদের মধ্যে আপোষ-মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, আশা করা যায় তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হবে।❞ [আল-হুজরাত ৪৯:৯-১০]
0 notes
i2truth-blog · 6 years
Text
ইলমুল কালাম ও এর ইতিহাস
আল কালাম শব্দের অর্থ কথা, বাক্য, বক্তব্য, বিতর্ক (word, speech, conversation, debate) ইত্যাদি। ইলমুল কালাম বলতে মূলত ধর্মবিশ্বাসের বিষয়ে দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা ভিত্তিক আলোচনা বুঝানো হয়। প্রাচীন যুগ থেকে দার্শনিকগণ মানবীয় যুক্তি, বুদ্ধি, জ্ঞান বা দর্শনের মাধ্যমে মানবীয় ইন্দ্রিয়ের অজ্ঞান বিষয়সমূহ নিয়ে গবেষণা করেছেন। স্রষ্টার প্রকৃতি, কর্ম, বিশেষণ ইত্যাদি বিষয়ে যুক্তি তর্ক দিয়ে তারা অনেক কথা বলেছেন। এ সকল বুদ্ধিবৃত্তিক যুক্তিতর্ক মানুষকে অত্যন্ত আকর্ষিত করলেও এসব বিষয়ে তা সত্যে পৌছাতে পারেনি। কারণ এটা মানুষের সক্ষমতার বাইরে। দ্বিতীয় হিজরী শতক থেকে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে গ্রীক, ভারতীয় ও পারসিক দর্শন প্রচার ও প্রসার লাভ করে। সাহাবীগণের অনুসারী মূলধারার তাবিয়ীগণ ও তাঁদের অনুসারী আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের আলিমগণ ঈমান বা আকীদার বিষয়ে বা গাইবী বিষয়ে দার্শনিক বিতর্ক কঠিনভাবে অপছন্দ করতেন। কারণ তারা বিশ্বাস করতেন যে, গাইবী বিষয়ে ওহীর উপর নির্ভর করা এবং ওহীর নির্দেশনাকে সর্বান্তকরণে মেনে নেওয়াই মুমিনের মুক্তির পথ। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) বলেন, ❝যে ব্যক্তি ইলমুল কালাম শিক্ষা করবে সে যিনদীকে পরিণত হবে❞ [ইবনু আবীল ইয, শারহুল আকীদাহ আত-তাহাবীয়্যাহ] - আহলুল কালামের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস - ইলমুল কালামে প্রথম খ্যাতি লাভকারী দল হচ্ছে - জাহমিয়্যাহ। প্রতিষ্ঠাতা জাহম বিন সাফওয়ান। সে আল্লাহর সিফাত(গুণ)সমূহ অস্বীকার করত। আল্লাহ দেখেন, শোনেন, কথা বলেন, আল্লাহর হায়াত, আল্লাহর আরশের উপর হওয়া, প্রথম আসমানে অবতরণ - এসবগুলো অস্বীকার করত। সিফাত ছাড়াও তাদের তাকদীর, ঈমানের সংজ্ঞা ইত্যাদি মৌলিক আকীদায় ভ্রষ্টতা ছিল। জাহমিয়্যাহদের সাথে হাদীস, সুন্নাহ এবং সাহাবীদের আছারের কোনো যোগসূত্র ছিল না। জাহমিয়্যাহদের পর খ্যাতি লাভ করে মুতাযিলা। ঈমানের প্রশ্নে হাসান আল বাসরীর মজলিস থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া বা ইতিযাল করায় ওয়াসেল বিন আত্বা এবং তার অনুসারীরা মুতাযিলা নামে খ্যাত হয়। মুতাযিলারা হাদীস, সুন্নাহ ও আছারে ভাল জ্ঞান রাখত। তবে তারা আকলী যুক্তির দোহাই দিয়ে নকল তথা কিতাব ও সুন্নাহর স্পষ্ট বিষয়কে অমান্য করত। তারা সিফাতের ক্ষেত্রে জাহমিয়্যাহদের পথ গ্রহণ করলেও, জাহমিয়্যাহদের চাইতে নমনীয় ছিল। এছাড়াও ঈমান ও তাকদীরের মাসআলায় তারা ভ্রষ্ট হয়। রাসুলের হাদীস ও সাহাবীদের আছার সম্পর্কে যারা ভালো জ্ঞান রাখত, এদের মধ্য থেকে ইলমুল কালামের একটি দল বের হয়। তাদের শীর্ষে ছিল ইবনুল কুল্লাব। তিনি মুহাদ্দিস ও ফকিহ ছিলেন। তিনি ইলমুল কালামকে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে সুন্নাহর সাথে সমন্বয়ের চেষ্টা করেন। আর একারণে তাকে নতুন নতুন আইডিয়া ও কনসেপ্ট তৈরি করতে হয়। মুতাযিলারা আল্লাহর কালাম বা কথা বলা অস্বীকার করত। কেননা কথা হচ্ছে শব্দ ও আওয়াজ। আল্লাহ এসব থেকে তাদের দাবি মোতাবেক মুক্ত। একারণে তাদের দাবি, মুসা আ. আল্লাহর সত্যিকারের কালাম শোনেন নি। বরং তাকে সৃষ্টি করা শব্দ ও ধ্বনি শোনানো হয়েছে। কুরআন যেহেতু শব্দ ও ধ্বনিবিশিষ্ট তাই এটি আল্লাহর কালাম নয়, বরং মাখলুক। ইবনুল কুল্লাব দুই কুল রক্ষা করতে বলে আল্লাহ কথা বলেন, কিন্তু সেটি কালামে নাফসি বা মনে মনে কথা। তাই এর কোনো শব্দ ও ধ্বনি নেই। তার মতে কুরআনের ভাব বা অর্থটুকুই কেবল আল্লাহর কালাম। কুরআনের হরফ, শব্দ হচ্ছে সেই ভাবের প্রকাশক। অর্থাৎ কুরআন স্বয়ং আল্লাহর কালাম নয়, বরং কালামের ইবারত বা প্রকাশক। এদিকে আহলুস সুন্নাহর ঐকমত্য আছে যে, আল্লাহ যখন কথা বলেন তখন তাতে ধ্বনি/আওয়াজ থাকে। আর আল্লাহর কথায় হরফ রয়েছে। কিন্তু এগুলো কোনোভাবেই মাখলুকের ধ্বনি বা শব্দের মত নয়। আহলুস সুন্নাহর আকীদা হচ্ছে, মুসা আ. সত্যিকারেই আল্লাহর কথা শুনেছেন এবং আল্লাহর সাথে কথোপকথন করেছেন। মুতাযিলি আকীদা ইরাক ও খুরাসানে হানাফী মাযহাবের অনুসারীদের একটি দলের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করে। বহু হানাফী মুতাযিলি হয়ে যায়। তারা ইমাম আবু হানীফার নামে মিথ্যা রটনা করে যে, তিনি বলেছেন আল্লাহর কালাম মাখলুক। অপরদিকে ঐসকল স্থানের হানাফীদের মাঝে যারা হাদীস ও সুন্নাহর সাথে ভালো সম্পর্ক রাখত, তাদের মাঝে ইবনুল কুল্লাবের অবস্থান গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। এই দলের মাঝে রয়েছেন আবু মনসুর মাতুরিদি। তিনি ইবন কুল্লাব ও মুতাযিলি আকীদার মাঝামাঝি একটি অবস্থান গ্রহণ করেন। তাফসীরে মাতুরিদিতে তার লেখা থেকে এটা স্পষ্ট। যেমন: তিনি কুরআনকে রূপক অর্থে আল্লাহর কালাম বলেন। তিনিও কালামে নাফসির প্রবক্তা ছিলেন। তিনি মুসা আ. এর সাথে আল্লাহর কালামকে মাখলুক বলেন এবং আল্লাহর সত্যিকার কালাম কোনো মাখলুকের শোনা অসম্ভব দাবি করেন। মাতুরিদি আকীদা হচ্ছে কুল্লাবি আকীদার প্রথম ধারা। এটি মুতাযিলি ও কুল্লাবি আকিদার মাঝামাঝি। কুল্লাবি আকিদার দ্বিতীয় ধারা হচ্ছে আশ'আরী আকিদা। ইমাম আবুল হাসান আল আশ'আরী জীবনের প্রথম ৪০ বছর খাটি মুতাযিলা ছিলেন। কেননা তার সৎপিতা আল জুব্বাই মুতাযিলিদের ইমাম ছিলেন। অতঃপর তিনি ইবনুল কুল্লাবের পথগ্রহণ করেন এবং অনেক লেখালেখি করেন। তিনি ছিলেন কুল্লাবি আকিদা ও বিশুদ্ধ সুন্নাহর মাঝামাঝি। তিনি ইলমুল কালামের যে ধারা এই সময়ে তৈরি করেন, তা হচ্ছে আশ'আরী ধারা। কিন্তু আল্লাহ তার উপর রহম করেন। ইমামুস সুন্নাহ আহমাদ বিন হাম্বালের রাজধানী বাগদাদে এসে যখন আবুল হাসান আল আশ'আরী আসহাবুল হাদীস হাম্বালীদের সংস্পর্শে আসেন, তখন তিনি ইমাম আহমাদের আকীদাকেই নিজের আকীদা বলে ঘোষণা দেন এবং কিতাবুল ইবানাহ রচনা করেন।
0 notes
i2truth-blog · 6 years
Text
ইসলামী আকীদা বা বিশ্বাসের উৎস
ইসলামী আকীদার একমাত্র উৎস হচ্ছে ‘ওহী’। আল্লাহ্-র রাসূলের (ﷺ) প্রতি দু প্রকারের ওহী প্রেরিত হয়েছে : কিতাব (কুরআন) ও হিকমাহ বা সুন্নাহ (হাদীস)। কুরআনে বলা হয়েছে, ❝...আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমাহ অবতীর্ণ করেছেন এবং আপনি যা জানতেন না তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন, আপনার প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে।❞ [আন নিসা ৪:১১৩] ‘হিকমাহ’ শব্দটি আরবী অভিধানে একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ইমাম রাগেব বলেন, এ শব্দটি আল্লাহ্‌-র জন্য ব্যবহৃত হলে এর অর্থ হয় সকল বস্তুর পূর্ণজ্ঞান ও সুদৃঢ় উদ্ভাবন। অন্যের জন্য ব্যবহৃত হলে এর অর্থ হয়, বিদ্যমান বস্তুসমূহের বিশুদ্ধ জ্ঞান, সৎকর্ম, ন্যায়, সুবিচার, সত্য কথা ইত্যাদি। এখানে উল্লেখিত ‘কিতাব’ হল কুরআন এবং ‘হিকমাহ’ হল আল্লাহ্-র রাসূলের (ﷺ) সুন্নাহ। হিকমাহ অর্থ কেউ কুরআনের তাফসীর, কেউ দ্বীনের গভীর জ্ঞান, কেউ শরীআতের বিধি-বিধানের জ্ঞান, কেউ এমন বিধিবিধানের জ্ঞান অর্জন বলেছেন, যা শুধু রাসূলের (ﷺ) বর্ণনা থেকেই জানা যায়। তাই রাসূলের (ﷺ) সুন্নাহ বা হিকমতও আল্লাহ্ তা’আলারই নাযিলকৃত। পার্থক্য এই যে, সুন্নাহর শব্দাবলী আল্লাহর পক্ষ থেকে নয়। এ কারণেই তা কুরআনের অন্তর্ভুক্ত নয়। অবশ্য কুরআন ও সুন্নাহ উভয়টিরই তথ্যসমূহ আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত। - → [ড. আবু বকর যাকারিয়া লিখিত কুরআনের সংক্ষিপ্ত তাফসীর অবলম্বনে] - কর্ম বা আমলের বিষয়ে অনুমান বা কিয়াসের উপরে নির্ভর করা যায়। কিন্তু ইসলামী বিশ্বাস গায়েব বা অদৃশ্য বিষয়ের উপর। এ সকল বিষয়ে মানুষ ওহীর নির্দেশনা ছাড়া কোনো ফয়সালা বা সমাধান দিতে সক্ষম নয়। এক্ষেত্রে ইজতিহাদ বা গবেষণা অচল। এ বিষয়ে ইমাম আবূ ইউসূফ (রহ.) বলেন, ❝তাওহীদ বা আকীদা কিয়াস দ্বারা শেখা যায় না। .... কারণ কিয়াস তো চলে এমন বিষয়ে যার তুলনা আছে ও নমুনা আছে। আর মহান মহাপবিত্র আল্লাহর তো কোনো তুলনাও নেই এবং নমুনাও নেই। মহান আল্লাহ তোমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে তুমি অনুসরণ করবে, শুনবে ও আনুগত্য করবে। যদি উম্মাতকে তাওহীদ সন্ধান ও ঈমান অর্জনের জন্য নিজস্ব মতামত, কিয়াস ও পছন্দের সুযোগ দেওয়া হয় তবে সবাই বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। তুমি কি শুন নি? মহান আল্লাহ বলেছেন, "আর সত্য যদি তাদের কামনা-বাসনার অনুগামী হত, তবে আসমানসমূহ, যমীন ও এতদোভয়ের মধ্যস্থিত সব কিছু বিপর্যস্ত হয়ে যেত।"[1] কাজেই এ আয়াতের তাফসীর ভাল করে হৃদয়ঙ্গম করো।❞ [1]আল-মু’মিনূন ২৩:৭১ - ● হাদীসের প্রকারভেদ মুহাদ্দিসগণের পরিভাষায় যে কথা, কর্ম, অনুমোদন বা বিবরণকে রাসূলুল্লাহর (ﷺ) বলে দাবী করা হয়েছে তাই হাদীস বলে পরিচিত। যে হাদীসের মধ্যে ৫টি শর্ত পূরণ হয়েছে তাকে সহীহ(ছহীহ) বা বিশুদ্ধ হাদীস বলা হয় : 1. হাদীসের সকল বর্ণনাকারী সৎ ও বিশ্বস্ত 2. বর্ণনাকারীদের নির্ভুল বর্ণনার ক্ষমতা পূর্ণরূপে বিদ্যমান 3. প্রত্যেক বর্ণনাকারী তার উর্ধ্বতন বর্ণনাকারী থেকে হাদীসটি স্বকর্ণে শুনেছেন বলে প্রমাণিত 4. অন্যান্য প্রামাণ্য বর্ণনার বিপরীত নয় বলে প্রমাণিত 5. সনদগত বা অর্থগত কোনো সুক্ষ্ম ত্রুটি নেই বলে প্রমাণিত দ্বিতীয় শর্তে সামান্য দুর্বলতা থাকলে হাদীসটি হাসান বলে গণ্য হতে পারে। শর্তগুলোর অবর্তমানে হাদীসটি যয়ীফ(দয়ীফ) বা দুর্বল অথবা বানোয়াট বা মাউযূ(মাউদু) হাদীস বলে গণ্য হতে পারে। ইসলামে দুর্বল ও বানোয়াট হাদীস আকীদা ও আমলের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। বর্ণনাকারীদের সংখ্যার দিক থেকে মুহাদ্দিসগণ সহীহ হাদীসকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন : 1. যেসকল হাদীস সাহাবীগণের যুগ থেকে সংকলন পর্যন্ত সকল স্তরে অনেক বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন তাকে মুতাওয়াতির বা অতি প্রসিদ্ধ হাদীস বলা হয়। 2. যেসকল হাদীস সাহাবীগণের যুগ থেকে সংকলন পর্যন্ত কোনো যুগে অল্প কয়েকজন বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন তাকে আহাদ বা খাবারুল ওয়াহিদ হাদীস বলা হয়। আকীদার ক্ষেত্রের মুতাওয়াতির বা অতি প্রসিদ্ধ হাদীস দ্বারা সুনিশ্চিত জ্ঞান লাভ করা যায়। খাবারুল ওয়াহিদ হাদীসও আকীদার ক্ষেত্রে গ্রহণীয়। তবে তা দ্বারা সুনিশ্চিত জ্ঞান লাভ করা যায় না। বরং তা কার্যকর ধারণা প্রদান করে। কর্মের ক্ষেত্রে বা কর্ম বিষয়ক হালাল, হারাম ইত্যাদি বিধিবিধানের ক্ষেত্রে এরূপ হাদীসের উপরে নির্ভর করা হয়। আকীদার মূল বিষয় প্রমাণের জন্য সাধারণত এরূপ হাদীসের উপর নির্ভর করা হয় না। তবে মূল বিষয়ের ব্যাখ্যায় এর উপর নির্ভর করা হয়। কুরআনে উল্লেখিত বা মুতাওয়াতির হাদীসের মাধ্যমে পরিজ্ঞাত কোনো বিষয় অস্বীকার করলে তা কুফরী বলে গণ্য হয়। আর খাবারুল ওয়াহিদের মাধ্যমে পরিজ্ঞাত বিষয় অস্বীকার করলে তা বিভ্রান্তি ও পাপ বলে গণ্য হয়। কুরআন পুরোপুরিই 'মুতাওয়াতির'ভাবে বর্ণিত। কেউ একটি শব্দকেও সমার্থক কোনো শব্দ দিয়ে পরিবর্তন করেন নি। সহীহ হাদীস তদ্রুপ নয়। হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সাহাবী তাবিয়ীগণ অর্থের দিকে বেশি লক্ষ্য রাখতেন। আরবী ভাষা ও বর্ণনাশৈলীর বিষয়ে অভিজ্ঞ সাহাবী-তাবিয়ীগণ প্রয়োজনে একটি শব্দের পরিবর্তে সমার্থক অন্য শব্দ ব্যবহার করতেন। - ● সহীহ হাদীসের উৎস অল্প সংখ্যক মুহাদ্দিস কেবলমাত্র সহীহ হাদীস সংকলনের চেষ্টা করেন। অধিকাংশ মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও আলিম সনদসহ হাদীস উল্লেখ করলে তা সহীহ না বানোয়াট তা বলার প্রয়োজন মনে করতেন না। আল্লামা ইবনুস সালাহ (রহ.) বলেন, ❝বুখারী ও মুসলিম গ্রন্থের বাইরে সহীহ হাদীস খুঁজতে হবে মাশহুর হাদীসের গ্রন্থগুলোতে, যেমন - আবূ দাঊদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনু খুযাইমা, দারাকুতনী ও অন্যান্যদের সংকলিত গ্রন্থ। তবে এ সকল গ্রন্থে যদি কোনো হাদীস উদ্ধৃত ক���ে তাকে সুস্পষ্টত 'সহীহ' বলে উল্লেখ করা হয় তবেই তা সহীহ বলে গণ্য হবে, শুধুমাত্র এ সকল গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করা হয়েছে বলেই হাদীসটিকে সহীহ মনে করা যাবে না। কারণ এ সকল গ্রন্থে সহীহ এবং যয়ীফ সব রকমের হাদীসই রয়েছে।❞ আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, ❝দ্বিতীয় হিজরী শতাব্দী থেকে শুরু করে পরবর্তী সকল যুগের অধিকাংশ মুহাদ্দিসের রীতি ছিল যে, সহীহ, যয়ীফ, মাউযূ, বাতিল সকল প্রকার হাদীস সনদসহ সংকলন করা। তাঁদের মূলনীতি ছিল যে, সনদ উল্লেখ করার অর্থই হাদীসটি বর্ণনার দায়ভায় বর্ণনাকারীদের উপর ছেড়ে দেয়া, সংকলকের আর কোনো দায় থাকে না।❞ - → [ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখিত ইসলামী আকীদা বই থেকে সংক্ষেপিত]
0 notes
i2truth-blog · 6 years
Text
ইসলামে আল্লাহ্-র প্রতি বিশ্বাস
আল্লাহ্-র উপর ঈমান চারটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। - প্রথমত: আল্লাহ্-র অস্তিত্বের প্রতি ঈমান আনা: স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস মানুষের জন্মগত ও প্রাকৃতিক অনুভূতি। এই বিশ্বের প্রতিটি সৃষ্টির মধ্যে স্রষ্টাকে চেনার ও জানার নিদর্শন ও প্রমাণ রয়েছে। স্রষ্টা ছাড়া এত নিখুঁত মহাবিশ্ব নিজেনিজে সৃষ্টি হওয়া সম্ভব না। - দ্বিতীয়ত: আল্লাহ্-র কর্তৃত্ব ও প্রতিপালকত্বে বিশ্বাস স্থাপন: অর্থাৎ এ বিশ্বাসে অটল থাকতে হবে যে, আল্লাহ্ একমাত্র রব, একমাত্র প্রতিপালক। রব (ﺭﺏ) বলা হয় তাঁকে যিনি সৃষ্টি করেন, পরিচালনা করেন এবং মালিকানা যাঁর জন্য। এই মহাবিশ্ব পরিচালনায় আল্লাহ্-র কোনো অংশীদার বা সহযোগী নেই। পবিত্র কুরআনে অনেক জায়গায় এ ঘোষণা উচ্চারিত হয়েছে - ❝...জেনে রাখুন, সৃষ্টি করা ও হুকুমের মালিক তিনি। বরকতময় আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতিপালক।❞ [সূরা আ’রাফ ৭:৫৪] ❝তুমি বল, ‘তোমাদেরকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী হতে রুযী দান করে কে? অথবা (তোমাদের) শ্রবণ ও দৃষ্টিসমূহের মালিক কে? আর মৃত হতে জীবন্ত এবং জীবন্ত হতে মৃত বের করে কে? আর সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে কে?’ তারা বলবে, ‘আল্লাহ।’ অতএব তুমি বল, ‘তাহলে কেন তোমরা তাঁকে ভয় করছ না?’❞ [সূরা ইউনুছ ১০:৩১] ❝তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সকল কার্য পরিচালনা করেন। তারপর তা একদিন তাঁর কাছেই উঠবে।...❞ [সূরা হা-মীম সেজদা, ৩২:০৫] ❝...তিনিই আল্লাহ্, তোমাদের প্রতিপালক। সমস্ত কর্তৃত্ব তাঁরই। আর তোমরা আল্লাহ্-র পরিবর্তে যাদেরকে ডাকো, তারা তো খেজুর আঁটির উপরে পাতলা আবরণেরও (অতি তুচ্ছ কিছুরও) মালিক নয়।❞ [সূরা ফাতির ৩৫:১৩] সূরা ফাতিহায় আল্লাহ্ বলেছেন, ( ﻣَﺎﻟِﻚِ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ) অর্থাৎ ❝তিনি বিচার দিবসের মালিক।❞ অন্য ক্বেরাতে এসেছে ( ﻣَﻠِﻚِ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ) অর্থাৎ ❝তিনি বিচার দিবসের রাজা বা বাদশাহ।❞ এই দুটি ক্বেরাতকে যদি একত্রিত করা হয় তাহলে চমৎকার একটি তাৎপর্য বেরিয়ে আসে। রাজত্ব ও কর্তৃত্ব বুঝাতে "ﻣَﺎﻟِﻚِ " (অধিকর্তা) শব্দের চেয়ে "ﻣَﻠِﻚِ" (রাজা) শব্দটি বেশী প্রাঞ্জল ও অর্থবোধক। কিন্তু কখনো কখনো "ﻣَﻠِﻚِ" (রাজা) দ্বারা শুধু নামসর্বস্ব কর্তৃত্বহীন রাজাকেও বুঝানো হয়। অর্থাৎ সে "ﻣَﻠِﻚِ" বা বাদশাহ-ই কিন্তু তার হাতে কোনো কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা না থাকায় তাকে "ﻣَﺎﻟِﻚِ " বা অধিকর্তা বলা যায় না। এজন্য দুই ক্বেরাতের "ﻣَﺎﻟِﻚِ " ও "ﻣَﻠِﻚِ" শব্দদ্বয় একত্র করলে আল্লাহ্-র জন্য রাজত্ব ও কর্তৃত্ব দুটোই নির্ধারিত হয়ে যায়। - তৃতীয়ত: আল্লাহ্-র উপাস্যত্বে বিশ্বাস স্থাপন: অর্থাৎ মনেপ্রাণে একথা বিশ্বাস করতে হবে যে- আল্লাহ্ই একমাত্র ইলাহ্ তথা সত্য উপাস্য। ইলাহ্ (ﺍﻻﻟﻪ) অর্থ হলো: সম্মান ও বড়ত্বের কারণে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় যার উপাসনা করা হয়। আর ইবাদত বা উপাসনা সেই সব কাজকে বলা হয়, যা কোনো ইলাহ্-র সন্তুষ্টি লাভের আশায় অথবা তাঁর অসন্তুষ্টির ভয়ে করা হয়। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, ❝আর তোমাদের উপাস্য একমাত্র আল্লাহ্। তিনি ছাড়া কোনো (সত্য) ইলাহ্ নেই। তিনি অতি দয়াময়, পরম দয়ালু।❞ [সূরা বাকারা ২:১৬৩] আরো বলেন, ❝আল্লাহ্ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই এবং ফেরেশতাগণ ও জ্ঞানীরাও (এ সাক্ষ্য প্রদান করে)। তিনি (আল্লাহ্) ন্যায় ও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি ব্যতীত অন্য কোনো (সত্য) উপাস্য নেই। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।❞ [সূরা আলে ইমরান ৩:১৮] আল্লাহ্কে বাদ দিয়ে আর যা কিছুর ইবাদত করা হয়, কিংবা আল্লাহ্-র সাথে আর যারই উপাসনা করা হয়, তার উপাস্যত্ব নিঃসন্দেহে বাতিল। আল্লাহ��� বলেন, ❝...আল্লাহ্, তিনিই একমাত্র সত্য। তারা তাঁর পরিবর্তে যাকে ডাকে, তা বাতিল। আর আল্লাহ্ সুউচ্চ, মহান।❞ [সূরা হজ্জ ২২:৬২] মক্কার মুশরিকরা লাত, মানাত, উজ্জাসহ বিভিন্ন মূর্তির উপাসনা করত। এগুলোর প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন, ❝এগুলোতো কতক নামমাত্র, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা রেখেছো। যার সমর্থনে আল্লাহ্ কোনো দলীল প্রেরণ করেননি।...❞ [সূরা নাজম ৫৩:২৩] কারাগারে ইউসুফ (আ.) তাঁর দু’সঙ্গীকে বলেছিলেন, ❝...ভিন্ন ভিন্ন বহু প্রতিপালক ভালো? নাকি মহাপরাক্রমশালী এক আল্লাহ্? তাঁকে বাদ দিয়ে তোমরা শুধু কতকগুলো নামের ইবাদত করছো, যে সব নাম তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা রেখেছো। যেগুলোর ব্যাপারে আল্লাহ্ কোনো প্রমাণ পাঠান নি।...❞ [সূরা ইউসুফ ১২:৩৯-৪০] কোনো নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, কিংবা প্রেরিত নবী, কিংবা অন্য কোনো কিছুই এ ক্ষেত্রে তাঁর অংশীদার হতে পারে না। আল্লাহ্ বলেন, ❝আমি তোমার পূর্বে এমন কোনো রসূল পাঠাইনি যার প্রতি আমি এই ওহী নাযিল করিনি যে- আমি ছাড়া অন্য কোনো (সত্য) ইলাহ্ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর।❞ [সূরা আম্বিয়া, ২১:২৫] আল্লাহ্ আরো বলেন, ❝আমি প্রত্যেক জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছি (এ নির্দেশ দিয়ে) যে, তোমরা আল্লাহর ‘ইবাদাত কর আর তাগুতকে বর্জন কর।...❞ [সূরা নাহল, ১৬:৩৬] - চতুর্থত: আল্লাহ্-র সুন্দর নাম ও গুণসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপন: অর্থাৎ আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁর নিজের জন্য তাঁর কিতাবে বা তাঁর রসূলের সুন্নতে যে সমস্ত উপযুক্ত সুন্দর আসমা(নাম) ও সিফাত(গুণ) সাব্যস্ত করেছেন সেগুলোকে কোনো ধরণের ﺗﺤﺮﻳﻒ (গুণকে বিকৃত করা), ﺗﻌﻄﻴﻞ (গুণকে অস্বীকার করা), ﺗﻜﻴﻴﻒ (গুণ বা বৈশিষ্ট্যের অবয়ব নির্ধারণ করা) বা ﺗﻤﺜﻴﻞ (মাখলুকের গুণের সাথে সাদৃশ্য দেয়া) ছাড়া নিঃসঙ্কোচে মেনে নেয়া। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, ❝আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে।❞ [সূরা আ’রাফ, ৭:১৮০] আরো বলেন, ❝...আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে সর্বোচ্চ মর্যাদা তাঁরই এবং তিনিই পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।❞ [সূরা রুম, ৩০:২৭] এ আয়াতটি আল্লাহ্-র পরিপূর্ণ গুণসমূহ সাব্যস্ত হওয়ার প্রমাণ। কেননা, আয়াতে বর্ণিত ﺍﻟْﻤَﺜَﻞُ ﺍﻷَﻋْﻠَﻰ অর্থ হলো পরিপূর্ণ গুণ। "আল্লাহ্-র নাম ও গুণ" জ্ঞানের এমন একটি শাখা যে বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ চরম মতপার্থক্যে লিপ্ত হয়েছে। এ মতপার্থক্যগুলোর সূত্র ধরে তারা নানা দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন, ❝...যদি তোমাদের মধ্যে কোনো বিষয়ে কোনো মতবিরোধ হয়, তবে আল্লাহ্‌ ও রসূলের দিকে প্রত্যাবর্তিত হও, যদি তোমরা আল্লাহ্‌ ও পরকালে বিশ্বাস করে থাকো। এটাই কল্যাণকর ও শ্রেষ্ঠতর পরিসমাপ্তি।❞ [সূরা নিসা ৪:৫৯] পাশাপাশি সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীদের মতামতগুলো গ্রহণ করতে হবে। কারণ তাঁরা ছিলেন আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের কথার তাৎপর্য বোঝার ক্ষেত্রে সবচেয়ে যোগ্য ও বিজ্ঞ ব্যক্তি। যে কেউ সাহাবী ও তাবেয়ীদের পথ থেকে সরে গিয়েছে, সেই পথভ্রষ্ট হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন, ❝যে ব্যক্তি সত্য পথ প্রকাশিত হওয়ার পরও রসূলের বিরোধিতা করে এবং মু'মিনদের পথ বাদ দিয়ে ভিন্ন পথ অনুসরণ করে, আমি তাকে সে পথেই ফিরাবো যে পথে সে ফিরে যায়, আর তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবো, কত মন্দই না সে আবাস!❞ [সূরা নিসা ৪:১১৫] আল্লাহ্ তায়ালা হেদায়েতের জন্য শর্ত করে দিয়েছেন যে, ঈমান হতে হবে রসূল (ﷺ) এর সঙ্গীদের ঈমানের মত। আল্লাহ্ বলেন, ❝অতএব তোমরা যেরূপ বিশ্বাস স্থাপন করেছ, তারাও যদি তদ্রূপ বিশ্বাস স্থাপন করে তবে নিশ্চয়ই তারা সুপথপ্রাপ্ত হবে।❞ [সূরা বাকারাহ ২:১৩৭] আমাদের জন্য আবশ্যক হলো, আমরা আল্লাহ্-র জন্য কেবলমাত্র সেসব নাম ও গুণ সাব্যস্ত করব, যা তিনি অথবা তাঁর রসূল (ﷺ) সাব্যস্ত করেছেন। আমাদের জেনে রাখতে হবে যে, এখানে চারটি বিষয় রয়েছে, যেগুলো বিপদসংকুল খাদের মত। যে ব্যক্তি এগুলোর কোনোটায় পড়বে, আল্লাহ্-র নাম ও গুণের ব্যাপারে তার ঈমান যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হবে না। সেগুলো হল- (১) তাহরীফ (ﺗﺤﺮﻳﻒ) আল্লাহ্-র নাম ও গুণ সংক্রান্ত কুরআন বা হাদিসের নস্সমূহকে (স্পষ্ট দলীলসমূহকে) এর সঠিক অর্থ থেকে পরিবর্তন করে অন্য দিকে সরিয়ে নেয়া, কিংবা অন্য অর্থ করা, যা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল উদ্দেশ্য করেননি। যেমন- (ﻳﺪ ﺍﻟﻠﻪ) তথা আল্লাহ্-র হাত। আল্লাহ্-র হাত থাকার সিফাতটি কুরআন ও হাদিসের অনেক নস্ দ্বারাই প্রমাণিত। এখানে "হাত" কে নেয়ামত বা কুদরত অর্থে গ্রহণ করা তাহরীফ। (২) তা’তীল (ﺗﻌﻄﻴﻞ) আল্লাহর সকল নাম ও সিফাতকে অস্বীকার করা কিংবা এর কোনো কোনোটিকে অস্বীকার করাকে "তাতীল" বলে। সুতরাং কেউ যদি কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত আল্লাহ্-র নাম ও গুণসমূহের কোনো একটিকেও মানতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলেই সে তার ঈমানকে যথার্থভাবে বাস্তবায়নে সক্ষম হলো না। (৩) তামসীল (ﺗﻤﺜﻴﻞ) আল্লাহ্-র কোনো সিফাত বা বিশেষণকে মাখলুক বা সৃষ্টির সিফাতের সাথে সাদৃশ্য প্রদান করাকে "তামসীল" বলে। যেমন কেউ যদি বলে- ‘আল্লাহ্-র হাত মানুষের হাতের মত বা মাখলুক যেভাবে শুনে আল্লাহ্ও সেভাবে শোনেন কিংবা আল্লাহ্ আরশের উপরে সেভাবেই বসে আছেন যেভাবে মানুষ চেয়ারে বসে…’ সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যের সাথে স্রষ্টার বৈশিষ্ট্যকে তুলনা করা নিঃসন্দেহে বাতিল। আল্লাহ্ বলেন, ❝...কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়। তিনি সব শোনেন, সব দেখেন।❞ [সূরা শুরা ৪২:১১] (৪) তাকয়ীফ (ﺗﻜﻴﻴﻒ) আল্লাহ্-র সিফাত তথা বৈশিষ্ট্যসমূহের আকৃতি-প্রকৃতি ও হাকীকত নির্ধারণ করাকে "তাকয়ীফ" বলে। অর্থাৎ মানুষ তার কল্পনার দৌড় অনুযায়ী বা ভাষার চতুরতার আশ্রয় নিয়ে আল্লাহ্-র গুণাবলীর ধরণ নির্ধারণ করা। এটা অকাট্যভাবে নিষিদ্ধ ও বাতিল। মানুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয় আল্লাহ্-র সিফাতের বৈশিষ্ট্য জানা। আল্লাহ্ বলেন, ❝...তারা জ্ঞান দিয়ে তাঁকে আয়ত্ত করতে পারবে না।❞ [সূরা ত্বহা: ১১০] - IslamQA.info এর 34630 নং ফতোয়া থেকে সংক্ষেপিত
0 notes
i2truth-blog · 6 years
Text
ভাগ্য ও নিয়তি সম্পর্কে ইসলামী বিশ্বাস
এ মহাবিশ্বে যা কিছু ঘটবে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক তাঁর পূর্বজ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী সেসব কিছু নির্ধারণ করে রাখাকে তাকদীর বলা হয়। তাকদীরের প্রতি ঈমান বা বিশ্বাস চারটি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে। ১. এই ঈমান আনা যে, আল্লাহ তাআলা প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে সমষ্টিগতভাবে ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানেন। তাঁর এ জানা অনাদি ও অনন���ত -তাঁর নিজ কর্ম সম্পর্কে অথবা বান্দার কর্ম সম্পর্কে। ২. এই ঈমান আনা যে, আল্লাহ তাআলা লওহে মাহফুজে সবকিছু লিখে রেখেছেন। এ দুটি বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন: ❝তুমি কি জান না যে, আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, আল্লাহ তা জানেন? নিশ্চয় তা একটি কিতাবে রয়েছে। অবশ্যই এটা আল্লাহর জন্য খুবই সহজ।❞ [সূরা হজ্জ, আয়াত: ৭০] সহিহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন, ❝আমি রাসূলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতে শুনেছি তিনি বলেন: আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিকূল সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে সৃষ্টিকূলের তাকদীর লিখে রেখেছেন।❞ তিনি আরো বলেন: ❝আল্লাহ তাআলা প্রথম সৃষ্টি করেছেন কলম। সৃষ্টির পর কলমকে বললেন: ‘লিখ’। কলম বলল: ইয়া রব্ব! কী লিখব? তিনি বললেন: কিয়ামত পর্যন্ত প্রত্যেক জিনিসের তাকদীর লিখ।❞ [আবু দাউদ (৪৭০০), আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] ৩. এই ঈমান রাখা যে, কোনো কিছুই আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে ঘটে না। হোক না সেটা আল্লাহর কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট অথবা মাখলুক বা সৃষ্টির কর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট। আল্লাহ তাআলা বলেন: ❝আর আপনার পালনকর্তা যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং (যা ইচ্ছা) মনোনীত করেন।...❞ [সূরা কাসাস, আয়াত: ৬৮] তিনি আরো বলেন: ❝...এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা সেটাই করেন❞ [সূরা ইব্রাহিম, আয়াত: ২৭] তিনি আরো বলেন: ❝তিনিই মাতৃগর্ভে তোমাদেরকে আকৃতি দান করেন যেভাবে তিনি চান।...❞ [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬] বান্দার কর্ম সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন: ❝...আর আল্লাহ চাইলে অবশ্যই তাদেরকে তোমাদের উপর ক্ষমতা দিতে পারতেন। অতঃপর নিশ্চিতরূপে তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত।...❞ [সূরা নিসা, আয়াত: ৯০] তিনি আরো বলেন: ❝...তোমার রব যদি চাইতেন, তবে তারা তা করত না।...❞ [সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১১২] অতএব, সকল ঘটনা, সকল কর্ম, সকল অস্তিত্ব আল্লাহর ইচ্ছাই হয়। আল্লাহ যা চান সেটাই হয়, তিনি যা চান না, সেটা হয় না। ৪. যাবতীয় সবকিছুর জাত, বৈশিষ্ট্য, গতি ও স্থিতি সব আল্লাহর-ই সৃষ্টি। আল্লাহ তাআলা বলেন: ❝আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সবকিছুর তত্ত্বাবধায়ক।❞ [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬২] তিনি আরো বলেন: ❝...তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন অতঃপর তা নির্ধারণ করেছেন যথাযথ অনুপাতে।❞ [সূরা ফুরকান, আয়াত:২] তিনি নবী ইব্রাহিম (আলাইহিস সালাম) সম্পর্কে বলেন যে, তিনি তাঁর কওম বা জাতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন: ❝অথচ আল্লাহই তোমাদেরকে এবং তোমরা যা কর তা সৃষ্টি করেছেন?❞ [সূরা আস্-সাফ্ফাত, আয়াত: ৯৬] যে ব্যক্তি এ বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস করেছে সে তাকদীরের প্রতি সঠিকভাবে বিশ্বাস করেছে। - তাকদিরের প্রতি ঈমান আনা কর্মের ক্ষেত্রে বান্দার ইচ্ছাশক্তি থাকা ও ক্ষমতা থাকার সাথে সাংঘর্ষিক নয়। বান্দার ইচ্ছাশক্তি রয়েছে। বান্দা ইচ্ছা করলে কোনো নেক কাজ করতে পারে এবং ইচ্ছা করলে তা বর্জন করতে পারে। ইচ্ছা করলে কোনো গুনাহর কাজ করতে পারে এবং ইচ্ছা করলে তা বর্জন করতে পারে। • শারয়ি দলিল: আল্লাহ তাআলা বলেন: ❝ঐ দিনটি সত্য। অতএব যার ইচ্ছা সে তার রবের নিকট আশ্রয় গ্রহণ করুক।❞ [সূরা নাবা, আয়াত: ৩৯] ❝আর বলুন, ‘সত্য তোমাদের রব-এর কাছ থেকে; কাজেই যার ইচ্ছে ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছে কুফরী করুক।...❞ [সূরা কাহফ ১৮:২৯] ❝নিশ্চয় আমরা তাকে পথ নির্দেশ দিয়েছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে, না হয় সে অকৃতজ্ঞ হবে❞ [সূরা আল ইনসান ৭৬:৩] তিনি বান্দার সক্ষমতা সম্পর্কে বলেন: ❝অতএব, তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর❞ [সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৬] তিনি আরো বলেন: ❝আল্লাহ কোনো ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না। সে যা অর্জন করে তা তার-ই জন্য এবং সে যা কামাই করে তা তার-ই উপর বর্তাবে।...❞ [সূরা বাকারা, আয়াত: ২৮৬] • বাস্তব দলিল: প্রত্যেক মানুষ জানে যে, তার ইচ্ছাশক্তি ও ক্ষমতা রয়েছে। মানুষ তার ইচ্ছায় সাধিত কর্ম (যেমন- হাঁটা) এবং তার অনিচ্ছায় সাধিত কর্ম (যেমন- রোগীর কাঁপুনি) - এতদুভয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। তবে মানুষের ইচ্ছা ও ক্ষমতা আল্লাহর ইচ্ছা ও ক্ষমতার অনুবর্তী। এর দলিল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণী: ❝যে তোমাদের মধ্যে সরল পথে চলতে চায়, তার জন্য। আর তোমরা ইচ্ছা করতে পার না, যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ ইচ্ছা করেন।❞ [সূরা তাকবীর, আয়াত: ২৮-২৯] তাছাড়া গোটা মহাবিশ্ব আল্লাহ তাআলার মালিকানাধীন। অতএব, তাঁর মালিকানাভুক্ত রাজ্যে কোনোকিছু তাঁর অজ্ঞাতসারে অথবা অনিচ্ছায় ঘটা সম্ভব নয়। - তাকদীর আল্লাহ্-র গোপন বিষয়। তিনি যা আমাদের জানিয়েছেন আমরা তা বিশ্বাস করি আর যা জানান নি তাও আমরা গ্রহণ করি এবং বিশ্বাস করি। আমরা আল্লাহর কাজ ও বিচারের ব্যাপারে আমাদের সীমিত জ্ঞান ও বোধশক্তি দ্বারা বিতর্কে লিপ্ত হই না। বরং আমরা তাঁর ন্যায়বিচার ও প্রজ্ঞার উপর সম্পূর্ণ ঈমান আনি। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যা করেন তার জন্য জিজ্ঞাসিত হবেন না। আর আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন। - IslamQA.info এর 34732 নং ফতোয়া অবলম্বনে
0 notes
i2truth-blog · 6 years
Text
মুসলমান-অমুসলমান সম্পর্ক সংক্রান্ত নীতিমালা
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। ১. ইসলাম রহমত ও ন্যায়ের ধর্ম। ইসলাম মানুষের হেদায়েতের জন্য এবং মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বের করে আনার জন্য চেষ্টা করে। ২. হেকমত, সুন্দর উপদেশ ও উত্তম পন্থায় বিতর্কের মাধ্যমে অমুসলমানদেরকে দাওয়াত দেয়ার (আহ্বান করার) জন্য মুসলমানদেরকে আদেশ করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না। তবে তাদের মধ্যে ওরা ছাড়া, যারা জুলুম করেছে।”[সূরা আনকাবুত, আয়াত: ৪৬] ৩. ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দীন চায় তবে তার কাছ থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৮৫] ৪. মুসলমানদের কর্তব্য হচ্ছে- যে কোনো কাফেরকে কুরআন শুনার সুযোগ করে দেয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যদি মুশরিকদের কেউ তোমার কাছে আশ্রয় চায়, তাহলে তাকে আশ্রয় দাও, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পারে। অতঃপর তাকে পৌঁছিয়ে দাও তার নিরাপদ স্থানে।”[সূরা তওবা, আয়াত: ৬] ৫. কাফেরদের প্রকারভেদ অনুযায়ী মুসলমানেরা তাদের সাথে আচরণ করবে। তাদের মধ্যে যারা শান্তিচুক্তি করেছে তাদের সাথে চুক্তি বজায় রাখবে। যারা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত তাদের সাথে যুদ্ধরত কাফের (হারব���) হিসেবে আচরণ করবে। আর যারা পৃথিবীতে ইসলামের বাণী প্রচার ও ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে। ৬. আল্লাহ সম্পর্কে কোনো অমুসলিম কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে এর উপর নির্ভর করবে কোনো মুসলমানের সাথে তার আন্তরিক ভালবাসা বা ঘৃণার সম্পর্ক কি হবে। যদি তারা আল্লাহর উপাসনা করে এবং তাঁর সাথে কোনো অংশীদার সাব্যস্ত না করে তাহলে মুসলমানেরা তাদেরকে ভালবাসবে। যদি তারা আল্লাহর সাথে শরীক করে, তাঁকে অস্বীকার (কুফরী) করে, তাঁর সাথে অন্য কারো উপাসনা করে অথবা তাঁর ধর্মের (ইসলামের) সাথে শত্রুতা করে এবং সত্যকে প্রত্যাখান করে তাহলে তাদেরকে ঘৃণা করা মুসলমানের জন্য অপরিহার্য। ৭. কোনো অমুসলিমকে আন্তরিক ঘৃণা করার অর্থ এই নয় যে, তার উপর অত্যাচার করা। কারণ আহলে কিতাবদের সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কেমন আচরণ করা আবশ্যক তা উদ্ধৃত করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে আমি আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের রব। আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের; আমাদের ও তোমাদের মধ্যে কোনো বিবাদ-বিসম্বাদ নেই; আল্লাহ আমাদেরকে একত্র করবেন এবং প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত:১৫] অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন মুসলিম, আর তারা হচ্ছে- ইহুদী ও খ্রিস্টান। ৮. মুসলমান বিশ্বাস করবে যে, কোনো অমুসলিমের উপর কোনো প্রকার জুলুম করা নাজায়েয। অতএব কোনো অমুসলিমের উপর শারীরিকভাবে আক্রমণ করবে না, ভয় প্রদর্শন করবে না, তার সম্পদ চুরি বা আত্মসাৎ করবে না, তার অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করবে না। তার রাখা আমানতকে অস্বীকার করবে না। তার মজুরি থেকে তাকে বঞ্চিত করবে না। তার কাছ থেকে কোনো কিছু খরিদ করলে মূল্য পরিশোধ করবে। যৌথভাবে ব্যবসা করলে ব্যবসার লাভ প্রদান করবে। ৯. মুসলমান বিশ্বাস করবে যে, সে যদি কোনো অমুসলমান প্রতিপক্ষের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হয় তাহলে তাকে চুক্তির প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। যদি কোনো অমুসলমান মুসলমানদের পেশকৃত শর্তসমূহ মানতে একমত হয়ে মুসলিম দেশে প্রবেশের অনুমতি (ভিসা) গ্রহণ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সে অমুসলিম চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলে ততক্ষণ পর্যন্ত মুসলমানদের জন্য শর্তভঙ্গ করা, গাদ্দারি করা, চুরি করা, হত্যা করা অথবা বিধ্বংসী কোনো কাজ করা নাজায়েয। ১০. মুসলমান বিশ্বাস করবে যে, যে সকল অমুসলিম মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে তাদের ভূখণ্ড থেকে বহিস্কার করেছে অথবা বহিস্কারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছে এ ধরণের অমুসলিমের জান ও মাল মুসলমানদের জন্য হালাল (হত্যা করা বৈধ)। ১১. মুসলমান বিশ্বাস করবে যে, শান্তিচুক্তিতে আবদ্ধ অমুসলিমের সাথে ভাল ব্যবহার করা, আর্থিক সাহায্য করা, ক্ষুধার্ত হলে খাওয়ানো, বিপদে পড়লে ঋণ দেয়া, বৈধ বিষয়ে তার পক্ষে সুপারিশ করা, কোমল ভাষায় কথা বলা, সালামের জবাব দেয়া ইত্যাদি জায়েয (বৈধ)। আল্লাহ তাআলা এ বিষয়ে বলেন: “দীনের (ইসলামের) ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করছেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায় পরায়ণদেরকে ভালবাসেন।”। [সূরা মুমতাহিনা, আয়াত: ৮] ১২. অধিকার প্রতিষ্ঠা, অন্যায়ের প্রতিরোধ, মজলুমের সাহায্য, যে কোনো অকল্যাণ থেকে গোটা মানবজাতিকে হেফাযত করা যেমন- দূষণ প্রতিরোধ, নিরাপদ পরিবেশ, মহামারী রোগের সংক্রমণ রোধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে অমুসলিমের সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে কোনো বাধা নেই। ১৩. মুসলমান বিশ্বাস করবে কিছু কিছু বিধানের ক্ষেত্রে মুসলমান ও অমুসলমানের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। যেমন- রক্তমূল্য, মিরাছ বণ্টন, বিয়ে, বিয়ের অভিভাবকত্ব, মক্কায় প্রবেশ ইত্যাদি। ফিকাহের গ্রন্থসমূহে এ মাসয়ালাগুলো আলোচনা করা হয়েছে। তবে এ মাসয়ালাগুলোর ভিত্তি হচ্ছে- আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ। অতএব, এসব ক্ষেত্রে যে এক আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে ও যে আল্লাহকে অস্বীকার করেছে, তার সাথে শরিক করেছে এবং সত্য ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে উভয়ের মাঝে সমতা করা সম্ভবপর নয়। ১৪. মুসলিম দেশে ও অমুসলিম দেশে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়ার জন্য মুসলমানেরা নির্দেশিত। মুসলমানদের উচিত সত্য দ্বীনের বাণী বিশ্ববাসীর নিকট পৌঁছিয়ে দেয়া। পৃথিবীর সর্বত্র মসজিদ তৈরী করা। অমুসলিম জাতিসমূহের নিকট দায়ী প্রেরণ করা এবং তাদের শাসকবর্গের নিকট ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে পত্র প্রেরণ করা। ১৫. মুসলিম আলেমগণ অমুসলিমদের সাথে সংলাপের ব্যবস্থা করবেন। অমুসলিমদেরকে আলোচনা করার সুযোগ দিবেন, তাদের কথাবার্তা শুনবেন এবং তাদের সামনে সত্যকে তুলে ধরবেন। সর্বশেষে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন: বল, ‘হে কিতাবীগণ, তোমরা এমন কথার দিকে আস, যেটি আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদত করব না। তার সাথে কোনো কিছুকে শরীক করব না এবং আমাদের কেউ আল্লাহ ছাড়া কাউকে রব হিসাবে গ্রহণ করব না। তারপর যদি তারা বিমুখ হয় তবে বল, ‘তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম’। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬৪] আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: “আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনত, তবে অবশ্যই তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের কতক ঈমানদার। আর তাদের অধিকাংশই ফাসিক।” শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
0 notes
i2truth-blog · 6 years
Text
ইজতিহাদের শর্তসমূহ ও ফতোয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
শাইখ মুহাম্মদ বিন উছাইমীন (রহ.) বলেন: "শারঈ কোনো হুকুম জানার চেষ্টায় নিয়োজিত থাকাকে ইজতিহাদ বলে। যিনি এধরনের চেষ্টায় নিয়োজিত থাকেন তাকে মুজতাহিদ বলে। ইজতিহাদ করার কিছু শর্ত রয়েছে। যেমন: ১। ইজতিহাদ করার জন্য যে দলিলগুলো জানা প্রয়োজন সেগুলো জানা থাকা। যেমন- বিধিবিধান সংক্রান্ত আয়াতগুলো ও হাদিসগুলো। ২। হাদিস সহিহ ও দুর্বল হওয়া সংক্রান্ত জ্ঞান জানা থাকা। যেমন- হাদিসের সনদ ও রাবীদের পরিচয় ইত্যাদি। ৩। নাসেখ (রহিতকারী), মানসুখ (রহিত) ও ইজমা (ঐক্যমত) সংঘটিত হওয়া বিষয়গুলো জানা থাকা। যাতে করে, কোনো কিছুকে মানসুখ বলে হুকুম না দেয় কিংবা ইজমা বিরোধী কোনো হুকুম না দেয়। ৪। যে দলিলগুলোর কারণে হুকুম পাল্টে যেতে পারে যেমন- তাখসিস (সীমাবদ্ধকরণ), তাকয়িদ (শর্তযুক্ত করণ) ইত্যাদি দলিলগুলো জানা থাকা। যাতে করে এগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক কোনো হুকুম না দেয়। ৫। শব্��ের অর্থ নির্ণয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট আরবী ভাষা ও উসুলুল ফিকহ এর যে জ্ঞানগুলো রয়েছে সেগুলো জানা থাকা। যেমন- আম (সাধারণ), খাস (বিশেষ), মুতলাক্ব (শর্তহীন), মুকায়্যাদ (শর্তযুক্ত), মুজমাল (অ-ব্যাখ্যাত), মুবায়্যান (ব্যাখ্যাত) ইত্যাদি। যাতে করে শব্দের অর্থগত নির্দেশনার দাবী মোতাবেক হুকুম দিতে পারেন। ৬। দলিল থেকে হুকুম নির্ণয় করতে পারার যোগ্যতা থাকা।" [আল-উসুল মিন ইলমিল উসুল (পৃষ্ঠা:৮৫-৮৬) ও এর ব্যাখ্যা (পৃষ্ঠা:৫৮৪-৫৯০)] . কোনো একটি মাসআলার ক্ষেত্রে ইজতিহাদের শর্তগুলো পূরণ করলে কোনো ব্যক্তি উক্ত মাসআলায় ইজতিহাদ করার (নিজে গবেষণা করে শারঈ হুকুম বের করার) যোগ্য বিবেচিত হবে। যাদের ইজতিহাদ করার যোগ্যতা নেই তারা নির্ভরযোগ্য আলেমদের কাছ থেকে শারঈ হুকুম জেনে নেবে। . প্রশ্ন: একজন ব্যক্তির জন্য কখন ফতোয়া (ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর) দেয়া বৈধ? উত্তর: ইসলমের কোনো বিষয়ে ফতোয়া দিতে ও কথা বলতে হলে যথাযথ ইলম(জ্ঞান) ও যোগ্যতা থাকতে হবে। কোনো সন্দেহ নেই যথাযথ যোগ্যতা ছাড়া ফতোয়া দিতে নেমে পড়া বড় ধরনের গুনাহ এবং ইলম ছাড়া মতপ্রকাশের নামান্তর। হাদিসে এসেছে- “যে ব্যক্তিকে যথাযথ দলিল ছাড়া কোন ফতোয়া দেয়া হয়েছে তার পাপ ফতোয়াদানকারীর (মুফতি) উপর বর্তাবে।” [সহিহ; মুসনাদে আহমাদ (২/৩২১)] ফতোয়া দানের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করা কর্তব্য। কোনো বিষয়ে কথা বলার আগে এর উৎস, দলিল এবং তার পূর্বে এ অভিমত আর কে ব্যক্ত করেছেন ইত্যাদি জেনে তারপর কথা বলা। যদি তার সে যোগ্যতা না থাকে তাহলে তার উচিত এ দায়িত্ব উপযুক্ত ব্যক্তির জন্য ছেড়ে দেয়া। সে যে বিষয়গুলো জানে সেগুলোর মধ্যে তাকে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত এবং সে যা অর্জন করেছে সেটার উপর তার আমল করা উচিত এবং ইলম অর্জন চালিয়ে যাওয়া উচিত। যাতে সে ইজতিহাদ করার যোগ্যতায় পৌঁছতে পারে। আল্লাহই সঠিক পথে পরিচালনাকারী।
0 notes
i2truth-blog · 6 years
Text
ভালোবাসার প্রকারভেদ
ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন: ভালোবাসা চার প্রকার। এ প্রকারগুলোর মধ্যে পার্থক্য করতে জানা আবশ্যকীয়। এ ভালোবাসাগুলোর মাঝে পার্থক্য করতে না পারার কারণে যারা পথভ্রষ্ট হওয়ার তারা পথভ্রষ্ট হয়েছে: ১. আল্লাহ্কে ভালোবাসা: শুধু এই ভালোবাসা আল্লাহ্ থেকে ও তাঁর শাস্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এবং সওয়াব লাভে সফলকাম হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ মুশরিকরা, ক্রুশ-পূজারীরা, ইহুদীরা এবং অন্যান্য অনেকে আল্লাহ্কে ভালোবাসে। ২. আল্লাহ্ যা কিছুকে ভালোবাসেন সেটাকে ভালোবাসা: এই ভালোবাসা ব্যক্তিকে ইসলামে প্রবেশ করায় ও কুফর থেকে বের করে আনে। এই ভালোবাসা সর্বাধিক প্রতিষ্ঠাকারী ব্যক্তি আল্লাহ্-র কাছে সর্বাধিক প্রিয়। ৩. আল্লাহ্-র জন্য ভালোবাসা: এই ভালোবাসা দ্বিতীয় প্রকারের ভালোবাসার সম্পূরক। ‘আল্লাহ্-র জন্য ভালোবাসা’ ব্যতীত আল্লাহ্ যা কিছুকে ভালোবাসেন সেটাকে ভালোবাসা যথাযথ হতে পারে না। ৪. আল্লাহ্-র সাথে ভালোবাসা: এটি শির্কপূর্ণ ভালোবাসা। যে ব্যক্তি আল্লাহ্-র সাথে অন্য কিছুকে ভালোবাসে; আল্লাহ্-র জন্যেও নয়, আল্লাহ্-র কারণেও নয়– তবে সে ব্যক্তি আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যকে অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করল। এটাই হচ্ছে মুশরিকদের ভালোবাসা। পঞ্চম প্রকার আরেকটি ভালোবাসা আছে সেটা আমরা যে বিষয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেছি সেটার মধ্যে পড়ে না। সে ভালোবাসা হচ্ছে মানুষের সহজাত ভালোবাসা। তা হচ্ছে- মানুষের প্রবৃত্তির সাথে যা কিছু খাপ খায় সেটার প্রতি টান। যেমন পিপাসার্ত ব্যক্তি পানিকে ভালোবাসে। ক্ষুধার্ত ব্যক্তি খাবার ভালোবাসে। ঘুম, স্ত্রী-সন্তানের প্রতি ভালোবাসা। এ ধরণের ভালোবাসা নিন্দনীয় নয়, যদি না সেটা ব্যক্তিকে আল্লাহ্-র যিকির থেকে ও তাঁর ভালোবাসা থেকে দূরে না রাখে। তাইতো আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন: ❝হে মুমিনগণ! তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহ্-র যিকির থেকে দূরে না রাখে।❞ [সূরা মুনাফিকুন, আয়াত:৯] আল্লাহ্ তাআলা আরও বলেন: ❝এমন লোকেরা, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহ্-র যিকির থেকে, নামায কায়েম করা থেকে এবং যাকাত প্রদান করা থেকে দূরে না রাখে।❞ [সূরা নূর, আয়াত:৩৭][আল-জাওয়াব আল-কাফী (১/১৩৪)] - তিনি আরও বলেন: আল্লাহ্-র জন্য ভালোবাসা ও আল্লাহ্-র সাথে ভালোবাসার মাঝে পার্থক্য: এ পার্থক্যটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক মানুষের প্রয়োজন, বরং জরুরী এ ভালোবাসাদ্বয়ের মাঝে পার্থক্য জানা। কারণ আল্লাহ্-র জন্য ভালোবাসা ঈমানের পূর্ণতার অংশ। আর আল্লাহ্-র সাথে ভালোবাসা নিরেট শির্ক। এ দুটোর মাঝে পার্থক্য হলো– আল্লাহ্-র জন্য ভালাবাসা আল্লাহ্-র ভালোবাসারই অনুবর্তী। কেননা বান্দার অন্তরে যখন আল্লাহ্-র ভালোবাসা স্থান করে নেয় তখন এ ভালোবাসা আল্লাহ্ যা কিছুকে ভালোবাসেন সেসবকেও ভালোবাসা অবধারিত করে তোলে। আর যখন বান্দা আল্লাহ্ যা কিছুকে ভালোবাসেন সেসবকে ভালোবাসে, তখন সে ভালোবাসাটা হয় আল্লাহ্-র জন্য বা আল্লাহ্-র কারণে। যেমন– বান্দা আল্লাহ্-র রাসূলগণকে ভালোবাসে, তাঁর নবীগণকে ভালোবাসে, তাঁর ফেরেশতাগণকে ভালোবাসে, তাঁর বন্ধুগণকে ভালোবাসে; কারণ আল্লাহ্ এদেরকে ভালোবাসেন। আর আল্লাহ্ যাদেরকে ঘৃণা করেন; আল্লাহ্ ঘৃণা করার কারণে সেও তাদেরকে ঘৃণা করে। আল্লাহ্-র জন্য ভালোবাসা ও আল্লাহ্-র জন্য ঘৃণা করার আলামত হচ্ছে– আল্লাহ্-র কোনো শত্রু যদি তার প্রতি কোনো ইহসান করে, তার কোনো সেবা করে, তার কোনো প্রয়োজন পূরণ করে দেয় তদুপরি ঐ শত্রুর প্রতি তার ঘৃণাবোধ ভালোবাসাতে রূপান্তরিত হয় না। অনুরূপভাবে আল্লাহ্-র কোনো প্রিয় ব্যক্তি যদি তাকে ঘৃণা করে কিংবা কষ্ট দেয়; হয়তো ভুলক্রমে বা তার ব্যাপারে আল্লাহ্-র আনুগত্য করতে গিয়ে ইচ্ছা করে, বা ভুল-ব্যাখ্যার বশবর্তী হয়ে বা ইজতিহাদগত কারণে কিংবা বিদ্রোহবশতঃ যা থেকে ঐ ব্যক্তি তওবা করেছে; তদুপরি তার প্রতি যে ভালোবাসা ছিল সেটা ঘৃণাতে রূপান্তরিত হয় না। গোটা দ্বীন ভালোবাসা ও ঘৃণা-র এ চারটি নীতির উপর আবর্তিত হয়। এ দুটোর উপর কিছু কর্ম করা ও কিছু কর্ম না করা নির্ভর করে। যে ব্যক্তির ভালোবাসা, ঘৃণা, পালন ও বর্জন আল্লাহ্-র জন্য সে ব্যক্তি তার ঈমানকে পূর্ণতা দান করেছে। অর্থাৎ ভালবাসলে আল্লাহ্-র জন্য ভালোবাসে। ঘৃণা করলে আল্লাহ্-র জন্য ঘৃণা করে। কিছু করলে আল্লাহ্-র জন্য করে। কিছু বর্জন করলে আল্লাহ্-র জন্য বর্জন করে। এ চারটি শ্রেণীর মধ্যে যে অনুপাতে ঘাটতি হবে তার ঈমান ও দ্বীনদারিতেও সে অনুপাতে ঘাটতি হবে। এর বিপরীতে রয়েছে আল্লাহ্-��� সাথে ভালোবাসা। সেটা দুই প্রকার: এক প্রকার যা ব্যক্তির মূল তাওহিদের উপর আঘাত হানে। আর অন্য প্রকার যা পরিপূর্ণ একনিষ্ঠতা ও আল্লাহ্-র ভালোবাসার উপর আঘাত হানে, কিন্তু ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয় না। প্রথম প্রকার: যেমন– মুশরিকগণ কর্তৃক তাদের মূর্তিগুলোকে ও আল্লাহ্-র শরীকদারগুলোকে ভালোবাসা। আল্লাহ্ তাআলা বলেন: ❝আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহ্-র সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার মত ভালোবাসে।❞ [সূরা বাকারা, আয়াত:১৬৫] এ সকল মুশরিকগণ তাদের প্রতিমা, মূর্তি ও উপাস্যগুলোকে আল্লাহ্-র সাথে ভালোবাসে; যেভাবে তারা আল্লাহ্কে ভালোবাসে। এ ধরণের ভালোবাসা হচ্ছে- উপাসনা ও মৈত্রী শ্রেণীর ভালোবাসা; যে ভালোবাসার অনুবর্তী ভয়, আশা, ইবাদত ও দোয়া। এ ধরণের ভালোবাসাই– শির্ক; আল্লাহ্ যা ক্ষমা করবেন না। এই শরীকদার উপাস্যদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা ও এদেরকে চরম ঘৃণা করা ছাড়া, এদের পূজারীদেরকে ঘৃণা করা ও তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা ছাড়া ঈমান অর্জিত হবে না। তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আল্লাহ্ তাঁর রাসূলগণকে প্রেরণ করেছেন, তাঁর কিতাবসমূহ নাযিল করেছেন, এই শির্কী ভালোবাসা পোষণকারীদের জন্য জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। এই ভালোবাসা পোষণকারীদের বিরুদ্ধে লড়াইকারী ও তাঁর কারণে এদের সাথে শত্রুতা পোষণকারীদের জন্য জান্নাত সৃষ্টি করেছেন। অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহ্-র আরশ থেকে শুরু করে জমিন পর্যন্ত অন্য যা কিছুর উপাসনা করবে সে ব্যক্তি আল্লাহ্ ব্যতীত সেটাকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করল এবং তাঁর সাথে শির্ক করল; সে উপাস্য যেই হোক না কেন। সে উপাস্য থেকে বান্দা নিজের বৈরিতা ঘোষণা করা কতই প্রয়োজন। দ্বিতীয় প্রকার: আল্লাহ্ তাআলা মানব অন্তরে যা কিছু সুশোভিত করেছেন সেগুলোর প্রতি ভালোবাসা। যেমন– নারী, সন্তানসন্ততি, স্বর্ণ-রৌপ্য, ভাল জাতের সুন্দর ঘোড়া, গবাদি পশু, জমি ইত্যাদি। জৈবিক চাহিদা থেকে এগুলোর প্রতি ভালোবাসা। উদাহরণত: ক্ষুধার্ত ব্যক্তির খাবারের প্রতি ভালোবাসা। পিপাসার্ত ব্যক্তির পানির প্রতি ভালোবাসা। এই ভালোবাসা তিন ধরণের হতে পারে: • বান্দা যদি আল্লাহ্-র কাছে পৌঁছা, তাঁর সন্তুষ্টি ও আনুগত্য সম্পাদনের উপকরণ হিসেবে এগুলোকে ভালোবাসে তাহলে এ ভালোবাসার জন্য সে সওয়াব পাবে। এবং এ ভালোবাসা আল্লাহ্-র জন্য ভালোবাসার অধিভুক্ত হবে। এগুলোকে উপভোগ করে বান্দা স্বাদ পাবে। এটাই ছিল ইনসানে কামেলের অবস্থা যার কাছে দুনিয়ার জিনিসের মধ্যে: নারী ও সুগন্ধি প্রিয় ছিল। তিনি এ দুটোকে ভালবাসতেন আল্লাহ্-র ভালোবাসার সহায়ক হিসেবে, তাঁর রিসালাত ও নির্দেশ পৌঁছে দেয়ার সহায়ক হিসেবে। • আর যদি বান্দা এ জিনিসগুলোকে তার সহজাত স্বভাব, প্রবৃত্তি ও ইচ্ছার বশবর্তী হয়ে ভালোবাসে এবং আল্লাহ্ যা কিছুকে ভালোবাসেন ও যা কিছুতে সন্তুষ্ট হন সেগুলোর উপর এগুলোকে প্রাধান্য না দেয়; বরং প্রকৃতিগত টানের কারণে এগুলো অর্জন করে থাকেন তাহলে এ ভালোবাসা বৈধ বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত। এর জন্য বান্দাকে কোনো শাস্তি পেতে হবে না। তবে, আল্লাহ্-র জন্য ও আল্লাহ্-র কারণে যে ভালোবাসা সেটার পূর্ণতার মধ্যে কিছুটা ঘাটতি থাকবে। • আর যদি এগুলো অর্জনই বান্দার চূড়ান্ত টার্গেট হয়, তার উদ্দেশ্য-লক্ষ্য, চেষ্টা-প্রচেষ্টা সব এগুলো অর্জনের পিছনে এবং আল্লাহ্ যা কিছুকে ভালোবাসেন, যা কিছুর প্রতি সন্তুষ্ট হন সেগুলোর উপর এগুলো অর্জন করাকে প্রাধান্য দেয় তাহলে এ ব্যক্তি নিজের উপর জুলমকারী ও নিজের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণকারী। প্রথমটা হচ্ছে অগ্রসর ঈমানদারদের ভালোবাসা, দ্বিতীয়টি হচ্ছে মধ্যমমানের ঈমানদের ভালোবাসা, আর তৃতীয়টি জালেম তথা গুনাহগার ঈমানদারদের ভালোবাসা।[ইবনুল কাইয়্যেম রচিত ‘আর-রূহ’ (১/২৫৪)]
0 notes
i2truth-blog · 6 years
Text
নির্বাচিত ইসলামিক PDF বইসমূহ
বর্তমান সময়ে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন গুরুত্বপূর্ণ কারণ অনেক মানুষ ভুল ইসলাম মেনে চলছে, জ্ঞান ছাড়া ইসলাম সম্পর্কে বক্তব্য দেয়া বৃদ্ধি পাচ্ছে, অনেক মানুষ না জেনে তর্কে লিপ্ত হচ্ছে। এছাড়া অমুসলিমদের ইসলামের পথে আহ্বানের উদ্দেশ্যে ইসলাম সম্পর্কে জানানো প্রয়োজন। রসূলুল্লাহ বলেছেন : "যে ব্যক্তি ইলম(জ্ঞান) অন্বেষণের জন্য কোনো পথ অবলম্বন করে আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন।" (মুসলিম, তিরমিজি)
এখানে কিছু বইয়ের নাম পিডিএফ ডাউনলোড লিংকসহ দেয়া হল। যদিও এই বইগুলো পড়ে কেউ আলিম হতে পারবে না, তবে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা দূর হবে ইনশাআল্লাহ। যেসব বইয়ের প্রকাশকরা নিজেদের বইয়ের পিডিএফ অনলাইনে দেননি, সেগুলো এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। অ্যান্ড্রোয়েডে পিডিএফগুলো পড়ার জন্য Adobe Acrobat, ReadEra অ্যাপগুলো ব্যবহার করা যায়।
ইসলামের কিছু আলোচিত বিষয়ে অগ্রহণযোগ্য বিভ্রান্তি [0.7MB]
আক্বীদাতুত তাওহীদ [2.6MB]
বিশ্বনবী মুহাম্মাদের [ছ.] জীবনাদর্শ [1.0MB]
কুরআনুল কারীম (অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর) [83.2MB]
সীরাতুর রসূল [5.6MB]
সংক্ষিপ্ত ইসলামী ফিকাহ ১ম খণ্ড [12.6MB]
সংক্ষিপ্ত ইসলামী ফিকাহ ২য় খণ্ড [9.4MB]
হাদীসের নামে জালিয়াতি [6.3MB]
শারহুল আক্বীদা আত্-ত্বহাবীয়া ১ম খণ্ড [13.1MB]
শারহুল আক্বীদা আত্-ত্বহাবীয়া ২য় খণ্ড [17.1MB]
তরবিয়ত ও চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধন [1.0MB]
ফিক্বহের মূলনীতি [3.2MB]
রিয়াদুস সালেহীন ১ম খণ্ড [6.1MB]
রিয়াদুস সালেহীন ২য় খণ্ড [5.9MB]
অন্তর বিধ্বংসী বিষয় - প্রবৃত্তির অনুসরণ [0.7MB]
কাবীরা গুনাহ [7.8MB]
অন্তর বিধ্বংসী বিষয় - দুনিয়ার মহব্বত [1.4MB]
হাদিস শাস্ত্রের পরিভাষা পরিচিতি [1.8MB]
শুধু আল্লাহ্-র সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। রসূলুল্লাহ বলেছেন : "যে ব্যক্তি আলিমদের ওপর গৌরব করার জন্য অথবা জাহিল-মূর্খদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করার জন্য অথবা মানুষকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য জ্ঞানার্জন করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।" (হাসান: সুনানে নাসাঈ ২৬৫৪)
0 notes